ক্রীড়া ডেস্ক:
ইতিহাসসমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী ক্লাব সান্তোস। পেলে, নেইমারদের মতো কিংবদন্তি ফুটবলার তৈরি করেছে ক্লাবটি। গত বছর লিগের শেষ ম্যাচে হেরে ওই সান্তোস ডিভিশনে, অর্থাৎ সিরি ‘বি’তে নেমে যায়। ১১১ বছর পর সান্তোসের এই অবনমনে ভক্তদের কেউ লজ্জা পেয়েছেন, কেউ ক্ষুব্ধ হয়েছেন, কারও মন খারাপ হয়েছে। ‘পেলেকে এই দিন দেখতে হলো না’– এমনটা বলেও সান্ত্বনা খুঁজেছেন কেউ কেউ।
প্রায় এক বছরের দুঃসহ স্মৃতি মাড়িয়ে ওই সান্তোস দুই ম্যাচ হাতে থাকতে আবার শীর্ষ লিগে ফিরেছে। এখন ক্লাবটির নতুন পরিকল্পনায়, নতুন প্রজেক্ট দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জ। সান্তোসের ফেরা নিয়ে দলটির ফরোয়ার্ড লুইস গুইলহার্মে বলেন, ‘সত্যিই কঠিন একটা বছর গেল। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলছি। ইতিহাস গড়ার আনন্দ ঘিরে ধরেছে। এটি সম্মান ও আনন্দের বিষয়।’ মিডফিল্ডার স্কামিড বলেন, ‘এটি ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন বছর। মনে হচ্ছে, মিশন জয় করলাম। সবাই দারুণ সাহস দেখিয়েছেন।’
টেবিলে শীর্ষে থাকা সান্তোসের আপাতত লক্ষ্য সিরি ‘বি’ লিগের শিরোপা জেতা। তবে মূল লক্ষ্য নিশ্চয় ব্রাজিলিয়ান সিরি ‘এ’র সিংহাসন দখলে নেওয়া। আর্থিক সংকটে ক্লাবটি কয়েক বছর ধরে ধুঁকে ধুঁকে গত বছর অবনমনে পড়েছিল। ইউরোপের ক্লাবগুলোর কাছে ‘আগে খেলোয়াড় নাও, পরে টাকা’ এই মন্ত্রে ফুটবলার বিক্রি করেছে তারা। এভাবে প্রতিভাশূন্য হয়েছে ক্লাবটি। খেলোয়াড় বিক্রির অর্থেরও যথাযথ বণ্টন হয়নি।
এদিকে তারকাশূন্য হওয়ায় ধীরে ধীরে কমেছে গ্যালারির দর্শক। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক বছর ব্রাজিলের শীর্ষ লিগে ম্যাচপ্রতি ৮ হাজারের মতো দর্শক ছিল গ্যালারিতে। এতে ব্রাজিলের ক্লাব ফুটবলের ‘মৃত্যুর বাজনা’ শোনা যায়।
ইতিহাসের তিমির পথ পাড়ি দিয়ে শীর্ষ লিগে ফিরে নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে সান্তোস। ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট মার্সেলো টেক্সেইরা দাবি করেছেন, শক্ত একটা প্রজেক্ট হাতে আছে তাদের। সেই প্রজেক্টের বিস্তারিত খোলাসা করেননি তিনি। তবে আল হিলালে খেলা নেইমার জুনিয়রকে ঘরে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও নাকি আছে তাদের মাথায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালের সিদ্ধান্ত এখনই চূড়ান্ত করতে চাচ্ছি না। অনুমাননির্ভর সিদ্ধান্তও নেওয়া ঠিক হবে না। যদি নেইমারের চুক্তি বাতিল হয়, যদি সে ফ্রি এজেন্ট হয়, আমরা তাকে ফিরিয়ে আনতে পারি। নেইমার ও তার পরিবারের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো যোগাযোগ আছে। আমরা তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’
নেইমারকে কিনতে সান্তোসের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রজেক্ট হতে হবে পরিষ্কার। তাঁকে ঘিরে খেলার মতো ফুটবলার থাকতে হবে। আবার নেইমার নিজের শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরে একটা মৌসুম ফিট থেকে খেলতে পারলে বদলে যেতে পারে ক্লাবের আর্থিক পরিস্থিতি।
তবে ক্লাবের জন্য এখনই এত কিছু ভেবে ফেলা ঠিক মনে করছেন না সান্তোস প্রেসিডেন্ট, ‘সান্তোসের সময়টা তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর্যায়ে নেই। চলমান প্রজেক্ট, ক্লাবের আয় ও প্রাধান্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এখনই কোনো কিছু নিয়ে অতিরিক্ত মজে গেলে তা সান্তোস ও ব্রাজিলের ফুটবলের ক্ষতি করতে পারে।’