তিস্তায় পানি বাড়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা

প্রকাশিত: ৩:৩৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১৪, ২০২৩

নীলফামারী প্রতিনিধি:

উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে প্লাবিত হতে শুরু করেছে রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট, আমন বীজতলা ও ধান ক্ষেত। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা।

রোববার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ৮ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে বিকেল ৩টায় ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর গংগাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী, নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কালিগঞ্জ, ঝাড়সিংহেশ্বর, খগারচর, জুয়ার চর, বাংলাপাড়া, উত্তর খড়িবাড়ী, বাইশপুকুর ও জলঢাকা উপজেলার ফরেস্টের চর, ভাবনচুর, ডাউয়াবাড়ী, লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, ফকিরপাড়া, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর এবং গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

ডিমলা উপজেলার ছাতুনামা কেল্লাপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বলেন, দুইদিন ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের বাড়ির উঠান ও চলাচলের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ফসলি জমি ও আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। একই গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, বাড়িতে নদীর পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের ভেতরও পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিস্তায় আরেকটু পানি বাড়লে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে। রাতে ঘুম হবে না।

ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে রাতেই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, নদীর চরাঞ্চলের বসবাসকারী মানুষকে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চরাঞ্চলের ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাস জানানো হয়েছে। এ জন্য চরাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নেওয়ার জন্য নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা নিউজ পোস্টকে বলেন, উজানের ঢল আর ভারী বর্ষণে তিস্তার পানির প্রবাহ রোববার বিকেলের পর থেকে বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ব্যারেজের জলকপাট খুলে রেখে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উজানের পানি হ্রাস পেলে ও ভারী বৃষ্টিপাত না হলে কিছুটা পানি কমতে পারে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।

এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় এই অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়া, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া এবং কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে।