দুই বছরে দিল্লির তাপমাত্রা ‘সহনীয়’, ঢাকার কেন নয়?

প্রকাশিত: ১২:২৭ অপরাহ্ণ, মে ৭, ২০২৪

আফরিন আক্তারঃ

ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, উন্নত বিশ্বের ২০ ভাগ মানুষ শিল্পায়নের ৮০ ভাগ সুফল ভোগ করলেও বাকি ৮০ ভাগ মানুষ মাত্র ২০ ভাগ সুফল পায়। কিন্তু বিপরীতে এই আশিভাগ মানুষই বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির শতভাগ ভয়াবহতা ভোগ করছে।

এক সময় দিল্লিতেও তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিন্তু ওরা পুরো শহরকে গাছ দিয়ে ছেয়ে ফেলেছে এবং দুই বছরের ব্যবধানে তাদের শহরের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কেন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না, প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুল সালাম হলে ডক্টরস ফর ইকোসলিউশনের আয়োজনে ‘হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে অধিক গরমের পরিবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন অনুষ্ঠানের অন্যতম প্যানেল অব এক্সপার্ট ডা. শোয়েব মোমেন মজুমদার। তিনি বলেন, দূষিত নগরীর মধ্যে ঢাকা শহর প্রায় সব সময় ১, ২, ৩ নম্বরে থাকে। একসময় দিল্লিতেও তাপমাত্রা বেশি ছিল। কিন্তু ওরা পুরো শহরটাকে গাছ দিয়ে ছেয়ে ফেলেছেন। দুই বছরের ব্যবধানে তাদের শহরের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে। এক্ষেত্রে আমাদের নগর কর্তৃপক্ষ যদি বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে উদ্যোগী হন, যেটা নির্দিষ্ট মৌসুমে সীমাবদ্ধ থাকবে না তাহলে ভালো ফল আসবে।

ডা. আতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. আব্দুর রব। দাবদাহের নানা কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দাবদাহ একটি পারিপার্শ্বিক প্রভাবের ফল। শব্দ, আলো, তাপ, বৃষ্টিপাত, বায়ুর চাপ, বায়ুর গতি, পৃথিবী গরম কিংবা ঠান্ডা হওয়া– এসবই বৃক্ষ ও প্রাণীর ওপর প্রভাব ফেলছে। আর সব প্রাণী প্রভাব ফেলছে মানুষের ওপর।

পৃথিবী উষ্ণ হওয়া একটি প্রাকৃতিক বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এটা বহু আগে থেকেই হচ্ছে। দেশে-বিদেশে এ নিয়ে বহু সেমিনার হয়েছে। তবে এ নিয়ে ভূগোলবিদরা দুই ভাগে বিভক্ত। কেউ বলছেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং হচ্ছে, কেউ বলছেন হচ্ছে না। উন্নত বিশ্ব শিল্পায়ন করছে, সুফল ভোগ করছে ৮০ ভাগ। আর ২০ ভাগ শিল্পায়ন করছে পৃথিবীর ৮০ ভাগ মানুষ। শিল্পায়নসহ মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

অনুষ্ঠানে হিট স্ট্রোকের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, মানবদেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হলো ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৃষ্টিকর্তা আমাদের শরীরকে এমনভাবে তৈরি করেছেন যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে শরীর এটা মানিয়ে নিতে পারে। তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রিই থাকে। অন্যদিকে এটা দশমিক ৪ ডিগ্রি, দশমিক ৫ ডিগ্রি হয়ে হলেও শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রিই থাকবে। তবে তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেলে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার যেসব ব্যবস্থাপনা রয়েছে, এগুলো অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়ে যায়। তখনই আমাদের হিট সংশ্লিষ্ট নানা রোগ দেখা দেয়।

কারা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন ডা. মেহেদী হাসান। বলেন, শিশু ও বৃদ্ধ, যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, কাশি-শ্বাস কষ্টের রোগী, যারা পানি কম পান করেন, যারা মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন করেন, যেসব হার্টের রোগী নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ এবং সর্দির এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করেন এবং ডায়াবেটিস রোগী।