দুই লাখ ৬০ হাজার টন সার, এক কার্গো এলএনজি কেনার সিদ্ধান্ত আসছে
নতুন সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম সভা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সেলিনা আক্তার :
স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান এবং সৌদি আরব, রাশিয়া, কাতার ও মরক্কোর প্রতিষ্ঠান থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া, ৮০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি, ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি এবং ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি রয়েছে। পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমানির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব সার ও এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। কমিটির আহ্বায়ক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নতুন সরকারের অধীনে এটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক।
জানা গেছে, সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে ১ কার্গো এলএনজি আমদানির ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধনী ২০২১)’- এর আওতায় মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্সেস এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) সই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে কোটেশন সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি আমদানি করা হবে। এটি ২০২৪ সালের তৃতীয় এলএনজি আমদানির ক্রয় প্রস্তাব।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে ৪৭০ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে এই গ্যাস আমদানি করা হবে। প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম পড়বে ১০.৮৮ মার্কিন ডলার।
তিনি জানান, এলএনজির মূল্য স্বাভাবিক বাড়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ এর জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ পরিস্থিতিতে চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। ফলে ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার দাবি ওঠে।
এরপর ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধনী ২০২১)’- এর আওতায় মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্সেস এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) সই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবার স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। দেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্পট মার্কেট থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালে জুন পর্যন্ত মোট ১৩ কার্গো এলএনজি কিনতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি কেনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এজন্য সার্বিক বিবেচনায় গত ৯ জানুয়ারি থেকে আরপিজিসিএল থেকে এমএসপিএ স্বাক্ষরকারী ২২টি প্রতিষ্ঠানের কাছে স্পট মার্কেট থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হয়।
দরপ্রস্তাবে দুটি প্রতিষ্ঠান সাড়া দেয়। দুটি প্রস্তাবই রেসপন্সিভ হয়। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ড-ভিত্তিক টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম উল্লেখ করে ১০.৮৮ মার্কিন ডলার এবং যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ১১.৫৯৯ মার্কিন ডলার। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করে- বলে জানান জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ওই কর্মকর্তা।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ডিএপি, টিএসপি এবং এমওপি সার কেনার চারটি প্রস্তাব নিয়ে আসা হবে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় সৌদি আরব’র মা’আদেন থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করা হবে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর মাধ্যমে এই সার আমদানি করা হবে।
বিএডিসি’র মাধ্যমে মরক্কোর ওসিপি এস.এ থেকে আমদানি করা হবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার। এই সারও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় আমদানি করা হবে। একই সঙ্গে মরক্কো’র ওসিপি থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানি করা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর একটি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন এমওপি সার আমদানি করা। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাশিয়ার জেএসসি ফরিং ইকোমিক কর্পোরেশন ‘প্রোডিন্টরগ’ ও বিএডিসি’র মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় চতুর্থ লটে এই সার আমদানি করা হবে।
অন্যদিকে সৌদি আরব ও কাতারের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান থেকে সার কেনার চারটি প্রস্তাব নিয়ে আসবে শিল্প মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কাতারের কাতার কেমিক্যাল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (মুনতাজাত) থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব থাকবে। রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে এই সার কেনা হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়েল বাকি তিন প্রস্তাবের মধ্যে সৌদি আরবের সাবিক এগ্রি-নিউট্রিয়েন্টস কোম্পানি থেকে ইউরিয়া সার কেনার দুটি প্রস্তাব রয়েছে। রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন করে দুই লটে মোট ৬০ হাজার ইউরিয়া সার আমদানি করা হবে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের বাকি প্রস্তাবটিও ইউরিয়া সার কেনা সংক্রান্ত। দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনা হবে। কাফকো থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩তম লটে এই ইউরিয়া কেনা হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়েল এক কর্মকর্তা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সার কেনা সংক্রান্ত যে প্রস্তাবগুলো সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় উপস্থান করা হবে, তা অনুমোন পাবে বলে আমরা আশা করছি। এরই মধ্যে এসব সার কেনার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিলে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হবে।
সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত্র মন্ত্রিসভা কমিটির এক সদস্য বলেন, নতুন সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর মঙ্গলবার প্রথম সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সবকিছু ভালো করে পর্যালোচনা করেই ক্রয় সংক্রান্ত অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবো। কোনটি অনুমোদন দেওয়া হবে বা কোনটি দেওয়া হবে না সেটি এখন বলা সম্ভব না। সভায় আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটুকু বলতে পারি অপ্রয়োজনীয় কোনো ক্রয় আমরা অনুমোদন দেবো না। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেন ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হবে।