দুটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে কোটি টাকার দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারসহ গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ১:১৫ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিআইডির অভিযানে দুটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসময় প্রায় এক কোটি টাকা সমমূল্যের দেশি ও বৈদেশিক মুদ্রা জব্দ করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন মো. মকবুল হোসেন (৫০), মো. মাসুদ আলম (২৭), এম.এম. জাকারিয়া (৫৬) ও মো. জামাল উদ্দিন (৫৪)। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে ২১ লাখ টাকাসহ ৭৪ লাখ বাংলাদেশি টাকার মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা। সিআইডি জানায়, মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কোনো প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে দৈনিক বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রি করছিলেন তারা। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে নিউজ পোস্টকে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান।

তিনি বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজারের সখ সেন্টারে অবস্থিত ‘চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও ‘বকাউল মানি এক্সচেঞ্জ’ অফিস কক্ষে অভিযান পরিচালনা করে সিআইডি। এসময় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানে চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ অফিসে ঢুকে বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির জন্য শপিং ব্যাগ থেকে টাকা বের করার সময় মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় তার দেখানো মতে দোকানের ভেতর এক নম্বর কাউন্টারের সামনে থেকে দুই লাখ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৫৫ হাজার রিয়াল, তিন হাজার ৭০ ইউরো এবং ১৫৫০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে মকবুল জানান, এসব মুদ্রা চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জের মালিক আহমেদ নোমানের কাছে বিক্রির জন্য এবং বাংলাদেশি টাকা দিয়ে একই দোকান থেকে ইউএস ডলার কেনার উদ্দেশ্যে এসেছেন তিনি। এরপর চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের অফিসে অভিযান পরিচালনা করে এক নম্বর কাউন্টার থেকে ২০ হাজার ৭৫৫ ইউএস ডলার, ৪৮ হাজার ৯৩৭ সৌদি রিয়াল, ২১০০ ইউরো, ১১ হাজার ৭০০০ ভারতীয় রুপি, দুই হাজার ৯০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত এবং ৫ নম্বর কাউন্টার থেকে ১৩ লাখ বাংলাদেশি টাকা উদ্ধার করা হয়। এসময় আটক করা হয় মাসুদ আলমকে।

জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ জানান, তিনি ৫ নম্বর কাউন্টারের মালিক শামীমা আক্তারের ম্যানেজার। একই দোকানের ৮ নম্বর কাউন্টারের ফাইল ক্যাবিনেট থেকে দুই হাজার ২০ সৌদি রিয়াল ও ৬ লাখ বাংলাদেশি টাকা জব্দ করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান আরও বলেন, চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জের মালিক আহমেদ নোমান হলেও তিনি সব সময় দোকানে থাকেন না। তবে আহমেদ নোমানের হয়ে তার বড় ভাই এম.এম. জাকারিয়া দোকানটি পরিচালনা করেন। এম.এম. জাকারিয়া এই দোকানের মোট ৯টি কাউন্টারের মধ্যে ৯ নম্বর কাউন্টারের মালিক। পরবর্তীতে ৯ নম্বর কাউন্টার থেকে তাকে আটক করা হয়।

২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের মানি চেঞ্জার মনিটরিং সিস্টেমে চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের কাছে ৮০৬ ইউএস ডলার, ২০০ পাউন্ড, ৬২০ সৌদি রিয়াল এবং ৪০ ইউরো আছে বলে তথ্য থাকলেও প্রকৃত পক্ষে তারা গোপনে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে রাখে। এছাড়া চকবাজার মানি এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের ব্যবসার জন্য একটি কাউন্টার রাখার অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ৯টি কাউন্টার খুলে ব্যবসা করছে।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, পরবর্তীতে একই ভবনের নিচতলার ১১০ নম্বর রুমের বকাউল মানি একচেঞ্জের ভেতরে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৮৭৮ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, এক হাজার ৩৫ দুবাই দিরহাম, সাড়ে পাঁচ হাজার ভারতীয় রুপি জব্দ করা হয়। এ সময় মো. জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী কোনো মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান দৈনিক ২৫ হাজার ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করার জন্য মজুত রাখতে পারে। গ্রেফতাররা জেনেও যথাযথ নিয়ম ভঙ্গ করে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচা করে ও বৈদেশিক মুদ্রা কেনার জন্য বাংলাদেশি টাকা হেফাজতে রেখে ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩(১) ধারায় অপরাধ করেছেন। এজন্য ছয়জনের বিরুদ্ধে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে পল্টন মডেল থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করেছে সিআইডি।