সেলিনা আক্তার:
‘সৌদি আরবের পুরো রেমিট্যান্স এখন সরাসরি বাংলাদেশে আসছে না। দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসছে। একটি অসাধু চক্র সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স কিনে মজুত করছে এবং বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে। ফলে সেখানে বসেই বাংলাদেশের ডলার বাজার অস্থির করার চেষ্টা করছে তারা।’
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘সেন্টার ফর এনআরবি’ আয়োজিত ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
দায় পরিশোধের চাপে অনেক সময় ব্যাংকগুলো উচ্চমূল্য দিতেও রাজি হয়ে যাচ্ছে দাবি করে গভর্নর বলেন, এভাবে দেশের ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশের সঙ্গে আপনারা (ব্যাংক) এ কাজটি করবেন না। যদি বড় কোনো দায় পরিশোধের প্রয়োজন হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আসুন। আমরা ডলারের ব্যবস্থা করে দেব। তারপরও বিদেশি চক্রের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে ডলার কিনবেন না।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। আপনারা সাত দিন ডলার না কিনলে ওরা সোজা হয়ে যাবে। এখন চার মাসেরও বেশি আমাদনি দায় মেটানোর মতো রিজার্ভ বাংলাদেশের আছে। সুতরাং আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। একতাবদ্ধ থাকুন।
একটি ব্যাংকের উদাহারণ দিয়ে গভর্নর বলেন, এইতো গত মাসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সকালে ১২০ টাকায় ডলার কিনেছে। কিন্তু বিকেলে একই উৎস থেকে ১২৭ টাকায় ডলার কিনেছে। কারণ সেদিন ওই ব্যাংকের আমদানি দায় পরিশোধের জন্য পর্যাপ্ত ডলার ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে একই উৎস থেকে সকালের চেয়ে ৭ টাকা বেশি দিয়ে ডলার কিনেছে ব্যাংকটি। কিন্তু সেই সংকট এখন সমাধান হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে বড় পেমেন্টের চাপ থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আহসান এইচ মনসুর জানান, গত পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি মিলে অতিরিক্ত সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও রেমিট্যান্স বেড়েছে। একই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে। এখানে প্রবাসীদের অনেক বড় অবদান রয়েছে।
প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে বিদেশিদের ব্যাপক সহায়তা পাচ্ছি। আমরা আইনজীবী নিয়োগ করছি। তবে টাকা পাচারকারীদের বিদেশে থাকা সম্পদের তথ্য দিয়ে প্রবাসীরা সহায়তা করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দিনদুপুরে এমনভাবে চুরি হয়েছে, যা বিশ্বের আর কোথাও হয়নি। শুধু চট্টগ্রামভিত্তিক একটি গ্রুপই ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। এখন আমরা টাস্কফোর্স গঠন করেছি। বিদেশিরা কাজ করছে। আমরা পাচারকারীদের অর্থ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ফিরিয়ে আনব। আমাদের দেশের বাইরের আদালতেও জিততে হবে। এক্ষেত্রে যদি প্রবাসীরা পাচারকারীদের সম্পদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন তাহলে অনুসন্ধানে সুবিধা হবে, অর্থ ফিরিয়ে আনা সহজ হবে।