ডেস্ক রিপোর্ট:
ভারতের ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা ও মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিককে (৬৬) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তিনি রাজ্যটির বান্দ্রা পশ্চিমের তিনবারের বিধায়ক।
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকায় আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন। পুলিশ জানিয়েছে, আততায়ীরা লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য। তবে এখনো হত্যার দায় নেয়নি গ্যাংটি।
এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দশেরা উৎসব চলাকালে বাবা সিদ্দিককে গুলি করা হয়। এই শুটিংয়ে তিন ব্যক্তি অংশ নেন। তাকে হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপরজন পলাতক। গ্রেপ্তার দুজন হলেন হরিয়ানার গুরমাইল বলজিৎ সিং (২৩) ও উত্তর প্রদেশের ধর্মরাজ রাজেশ কাশ্যপ (১৯)। গ্রেপ্তার দুজনকে সাত ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে মুম্বাই পুলিশের অপরাধ শাখা (ক্রাইম ব্রাঞ্চ)।
পুলিশ জানিয়েছে, বাবা সিদ্দিককে লক্ষ্য করে অন্তত ছয়টি গুলি করা হয়। এর মধ্যে চারটি গুলি তার বুকে লাগে। এটি চুক্তিভিত্তিক হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা পুলিশের।
একাধিক সূত্রের ভাষ্য, তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তি পরিকল্পিত এই হত্যার কয়েক দিন আগে কুরিয়ারের মাধ্যমে অস্ত্র হাতে পেয়েছিলেন। তিন শুটার দুই মাস ধরে মুম্বাইয়ের কুরলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। বাসা ভাড়া ছিল মাসে ১৪ হাজার রুপি।
বলা হচ্ছে, বাবা সিদ্দিককে হত্যার জন্য শুটারদের অগ্রিম তিন লাখ রুপি দেওয়া হয়েছিল। এই হত্যার চুক্তি নেওয়া চারজনের মধ্যে অর্থ ভাগ হওয়ার কথা।
সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুই সন্দেহভাজন দাবি করেন, তারা প্রায় এক মাস ধরে বান্দ্রা পূর্বের শুটিং স্পটটি (গুলির স্থান) রেকি করেছিলেন। তারা বাবা সিদ্দিকের বাড়ি ও অফিস অনেক আগেই রেকি করেন।
সূত্র আরও জানায়, তিন সন্দেহভাজন ব্যক্তি একটি অটোরিকশায় করে শুটিং স্পটে এসেছিলেন। শুটিংয়ের আগে তারা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন। পুলিশের ধারণা, বাবা সিদ্দিকের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য অন্য কেউ এই তিন শুটারকে দিচ্ছিলেন।
গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশ পুলিশের সাহায্য চেয়েছে মুম্বাই পুলিশ।
বাবা সিদ্দিক প্রায় পাঁচ দশক কংগ্রেসের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি এনসিপিতে (অজিত পাওয়ার) যোগ দেন।
হত্যাকাণ্ডকে ‘কাপুরুষোচিত হামলা’ উল্লেখ করে মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার জানান, এই ঘটনায় তিনি ‘স্তম্ভিত’। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই হামলার নেপথ্যের ব্যক্তিদেরকেও খুঁজে বের করা হবে।
মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। রাহুল বলেন, বাবা সিদ্দিকের মর্মান্তিক হত্যায় স্তম্ভিত ও শোকাভিভূত হয়েছি। এই ভয়াবহ ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, মহারাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ধসে পড়েছে। রাজ্য সরকারকে এই হত্যার দায় নিতে হবে। ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
বলিউড তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল বাবা সিদ্দিকের। জমকালো পার্টি আয়োজনের জন্য তার সুনাম ছিল। অতীতে তার আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন শাহরুখ খান, সালমান খান ও সঞ্জয় দত্তের মতো বড় তারকারা। বাবা সিদ্দিক হত্যার জেরে সালমান খান তার জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘বিগ বস ১৮’র শুটিং বাতিল করেছেন।