দেশজুড়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা: ঢাকার চার প্রবেশমুখে থাকবে পাহারা

প্রকাশিত: ১০:০২ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৩
  • বিএনপি রাজধানী অচল কিংবা লাগাতার অবস্থানে গেলে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। উত্তপ্ত রাজনীতি। উদ্যোগ নেই সংলাপের। দৃশ্যমান মধ্যস্থতাকারীও নেই। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি।

পাল্টা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংঘাত ও সহিংসতার শঙ্কা জনমনে
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ২৮ অক্টোবর সমাবেশের পাশাপাশি রাজধানীর চার প্রবেশমুখে সকাল থেকেই পাহারা বসাবে আওয়ামী লীগ। সেই সঙ্গে ঢাকার ২০টি নির্বাচনী এলাকায় দিনভর সতর্ক অবস্থায় থাকবেন দলের স্থানীয় নেতাকর্মী। এসব কর্মসূচি গুছিয়ে আনতে আজ বুধবার বৈঠকে বসছেন মন্ত্রীসহ ঢাকার দুই মেয়র ও ১৭ এমপি। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এ বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিএনপি এ কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাজধানী অচল কিংবা লাগাতার অবস্থানে গেলে তাৎক্ষণিক পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সব সময়ই আওয়ামী লীগ সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ অশান্তি করলে সভা-সমাবেশ তো দূরের কথা, কোথাও দাঁড়াতেই পারত না বিএনপি। তবে ২৮ অক্টোবর ঘিরে অশান্তি, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা করতে এলে বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
বিএনপির রঙিন খোয়াব চুপসে যাবে– এমন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, অবরোধ আর দখলের হুমকি দিয়ে বিএনপির খায়েশ পূরণ হবে না। ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের মহাযাত্রা শুরু হবে। ওই দিন বিকেলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে জনতার ঢল নামবে।

অবশ্য ২৮ অক্টোবর দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলেছেন, দলের নেতাকর্মী সজাগ থাকবেন। সতর্ক পাহারা দেবেন। কোনো উস্কানিতে পা দেবেন না। কোনো ধরনের সংঘর্ষে জড়াবেন না। জনগণের সম্পদ ধ্বংসের মতো কোনো অঘটন ঘটলে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন।

তারপরও সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কা থাকলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রস্তুতি রয়েছে আওয়ামী লীগে। এ ক্ষেত্রে রাজধানীর চার প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, গাবতলী ও আবদুল্লাহপুর এলাকায় সতর্ক পাহারায় থেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করবেন স্থানীয় নেতাকর্মী। সেই সঙ্গে ঢাকার ২০টি নির্বাচনী এলাকায় সকাল থেকে সতর্ক অবস্থান নেওয়া হবে।

ঢাকায় আওয়ামী লীগের এমপি ১৭ জন। তারা নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রস্তুত রাখার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবেন। ঢাকার অন্য তিন এমপি বিরোধী দলের। ওই তিন নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করবেন স্থানীয় থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এদিকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের সমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগে কিছুটা দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো কারণে নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে আওয়ামী লীগও বায়তুল মোকাররম এলাকায় সমাবেশের অনুমতি পাবে না বলে নেতারা আশঙ্কা করছেন। সে ক্ষেত্রে সমাবেশের জন্য বিকল্প চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের দৃষ্টিতে এর আগের কর্মসূচিগুলোতে ভালোভাবে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজপথে থেকে বিএনপির কর্মসূচি নিষ্ফল করে দিয়েছে। ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ঘিরে নতুন করে হুংকার ছুড়ছেন বিএনপি নেতারা। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আন্দোলন থেকে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি এলে কিংবা আবারও অগ্নিসন্ত্রাস করা হলে, তা কঠোর হাতে দমন করা হবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগ যতটা সম্ভব সংযত আচরণ করছে। আগামীতেও সংযত থাকবে। বিএনপির কর্মসূচির দিকেও সতর্ক দৃষ্টি থাকবে। ওই দিন বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে তাদের হাত ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
প্রায় একই মন্তব্য করেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। তিনি বলেন, কোনো কারণে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তা সামলানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ। এখন ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে লোকবল সমাগমের প্রস্তুতি চলছে। ২৭ অক্টোবর পাড়া-মহল্লাভিত্তিক পাহারার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। এ প্রস্তুতি গুছিয়ে আনার জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে প্রতিনিধি সভা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। আজ বুধবার বিকেল ৩টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে মতবিনিময় সভা ডাকা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এ সভায় সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতাদের সঙ্গে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করবেন। এ সভায় উপস্থিত থাকবেন ঢাকার দুই মেয়র, ১৭ জন এমপি, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সহযোগী সংগঠনগুলোর কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের উত্তর-দক্ষিণ শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, মহানগরের আওতাধীন সব থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক জানিয়েছেন, আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য ১৭ জন এমপিকে অনুরোধ করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন– ঢাকা-১ আসনের সালমান ফজলুর রহমান, ঢাকা-২ আসনের অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ আসনের নসরুল হামিদ বিপু, ঢাকা-৫ আসনের কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা-৭ আসনের হাজী মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা-৯ আসনের সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা-১০ আসনের সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ঢাকা-১১ আসনের এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১২ আসনের আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের সাদেক খান, ঢাকা-১৪ আসনের আগা খান মিন্টু, ঢাকা-১৫ আসনের কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ আসনের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্‌, ঢাকা-১৭ আসনের মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ঢাকা-১৮ আসনের হাবিব হাসান, ঢাকা-১৯ আসনের ডা. এনামুর রহমান এবং ঢাকা-২০ আসনের বেনজীর আহমেদ।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় কমপক্ষে ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ সমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য এরই মধ্যে দলীয়ভাবে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকার আশপাশের পাঁচ জেলা মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জি এম তালেব হোসেন জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তিনি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন।