ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যাচ্ছে অনেকে

নিজেস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও সেখান থেকে রড, লোহালক্কড় ও পোড়া গাড়ির অংশ নিয়ে যেতে দেখা গেছে। দুপুরে রড কাটতে গিয়ে বাড়ির দোতালা থেকে পড়ে গিয়ে একজন নিম্ন আয়ের মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে রড ও লোহালক্কড় নিয়ে যাচ্ছে তাতে আরো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া বাড়ির তিন তলার সামনের অংশ অনেকটা ঝুলন্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। যেকোন সময়ে ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
গতকাল ছুটির দিন সকাল থেকে উত্সুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। অনেকে জিজ্ঞেস করছেন, এখানে আয়নাঘর কোথায়? ৩২ নম্বর বাড়ির পূর্বদিকে রাস্তার সঙ্গে ভূমি থেকে কংক্রিটের পিলার, ছাদ ও সিঁড়ি দেখা যায়। ভবনটির বেজমেন্টে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বলা হয় আয়নাঘর রয়েছে। বিষয়টি সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেটা জানতে পেরে গতকাল সকাল থেকে ওই ভবন ঘিরে উত্সুক জনতার ভিড় পড়ে যায়।
গতকাল এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কলাবাগান থেকে আগত হুমায়ন কবীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুনেছি ৩২ নম্বর বাড়ির নিচে আয়নাঘর আছে। এসে দেখি নির্মানাধীন বাড়ির নিচে বেজমেন্টের চারটি ফ্লোর রয়েছে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সিঁড়ি দিয়ে বেজমেন্টের প্রথম ফ্লোর নিচে নামতেই দেখি পানিতে ভরে আছে। রীতিমত একটা পুকুর হয়েছে। এখানেই নাকি আয়নাঘর পাওয়া গেছে। আসলে বেজমেন্টের তিনটি ফ্লোর পানিতে ডুবে গেছে। পানি কোথা থেকে এসেছে তা তিনি জানেন না।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জনতা ওই ভবনের নিচে আয়নাঘর থাকার কথা জানায়। এ নিয়ে গ্রাউন্ড ফ্লোরের মেঝেতে গোলাকার আকৃতির জায়গা জুড়ে কেটে ফেলে। ভিতরে মোবাইল ফোনের লাইট জ্বালিয়ে তেমন কিছুই দেখতে পাওয়া যায়নি। তবে অনেকে ওই ভবনে বেজমেন্টে গিয়ে সেসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও করে আয়নাঘর রয়েছে বলে সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা কংক্রিটের স্ল্যাব থেকে করাত দিয়ে রড কেটে নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনি ৬ কেজি রড কেটেছেন। এত রড কী করবেন জানতে চাইলে বললেন, বাজারে বিক্রি করবেন।
৩২ নম্বর বাড়ির পেছনের পাঁচতলা ভবনটি কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে পিলার, ছাদ ও সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এর প্রতিটি কক্ষ ও দেয়াল নির্মাণে সিরামিকের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। ঘটনার দিন অগ্নিসংযোগের পর প্রতিটি ফ্লোরে কিছু মূল্যবান জিনিসপত্র পুড়ে যায়। বৃহস্পতিবার এই ভবন থেকে অবশিষ্ট জিনিসপত্র উত্সুক জনতা নিয়ে যায়। গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের কোনো ফ্লোরেই কোনো জিনিসপত্র ও আসবাবপত্র নেই। প্রতিটি ফ্লোরে জানালার ভাঙা কাঁচ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। জানালা ও দরজার দামি চৌকাঠ ও থাই এলুমিনিয়ামের শিট সবকিছু খুলে নেয়া হয়েছে। তবে ভবনে একটি লিফট রয়েছে। আগুনে লিফট পুড়ে গেছে। গতকাল ৪/৫ জন ব্যক্তি পুড়ে যাওয়া লিফট খোলার চেষ্টা করছিল। তারা জানায়, লিফটটি খুলে নিয়ে একটি পিকআপে করে নিয়ে যাবেন। সেটি ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিবেন।
৩২ নম্বর বাড়ির পিছনে উত্তর-পূর্ব দিকের কোনায় গাড়ির শেডে অন্তত ৮ টি গাড়ি জ্বলে পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিল। পুড়ে যাওয়া এসব গাড়ির প্রায় সব অংশই নিয়ে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা। সর্বশেষ একটি মাইক্রোবাসের পোড়া অংশ একটি পিকআপ ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়। উত্সুক মানুষেরা ভাঙা বাড়ির ভেতরে ও আশপাশে ঘুরে দেখছেন। সেলফি তুলছেন। ৩২ নম্বর সড়ক দিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই গাড়ির গতি কমিয়ে জানালা দিয়ে বাড়িটি দেখছেন। কয়েকজনকে হাতুড়ি দিয়ে কংক্রিটের বড় স্ল্যাব ভেঙে রড বের করে আনতে দেখা গেছে। একদল মানুষ করাত দিয়ে সেই রড কাটছেন। আবার তারা সেই রড নিয়ে যাচ্ছেন। কাউকে কাউকে বাড়িটির ইট নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গত বুধবার রাতে ধানমন্ডির ওই বাড়ি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার রাতেই ক্রেন, এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। রাতে যুক্ত হয় বুলডোজার।