নজর থাকবে পশ্চিমা বিশ্বে: ভোটের পরে এবার দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা বিএনপির

প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৪

# তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেন এমন কর্মসূচি চান

# মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিকে তাকিয়ে বিএনপি
#দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন- বলছেন শীর্ষ নেতারা
# মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে নতুন কর্মসূচি

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। রাত পোহানোর আগেই হয়তো জানা যাবে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল। শেষ পর্যন্ত সরকারকে ভোট থেকে নিবৃত করতে ব্যর্থ হলেও ভোটের একদিন পর থেকে নতুন ছক এঁটে দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। ভোট হয়ে গেলেও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। তৃণমূল চাইছে জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি, তারা যেন মাঠে নামতে পারে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দিক থেকে বার্তার অপেক্ষায় থাকবে বলেও শোনা যাচ্ছে।

বিএনপি নেতারা জানান, চলমান আন্দোলন বেগবান করতে শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এ কর্মসূচির মাধ্যমেই জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে।

হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ যেভাবে চলছে এভাবে চলবে। এর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। গোটা দেশের জনগণসহ গোটা বিশ্ব আওয়ামী লীগের এই ডামি নির্বাচন দেখলো। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন থেকে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরা যে কোনো কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত। দলীয় হাইকমান্ড যে কর্মসূচি নেবেন সেটাই পালন করবো।

দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ঠেকাতে না পারলেও নতুন সংসদ বেশিদিন টিকবে না- এমন বার্তা দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে ঘর-বাড়ি ছাড়া মামলা-হামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে শান্তিপূর্ণভাবে জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের আন্দোলন আরও জোরালো করার পরিকল্পনা রয়েছে দলের। এরই মধ্যে ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দায়িত্ব পালন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশের ভোটের পরিস্থিতি থেকে যেসব তথ্য-প্রমাণাদি পাওয়া যায় তা সংরক্ষণ করে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে উপস্থাপনের পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও দলের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হবে।’

ভোটের পর কী কর্মসূচি হবে, তার জন্য একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আছে। এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম করে যাবে।- আবদুল মঈন খান

দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার থেকে শান্তিপূর্ণভাবে জনসম্পৃক্তমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠের আন্দোলন আরও জোরালো করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সেক্ষেত্রে কর্মসূচি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন আলোচনা রয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি যেসব কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছে সেখানেই তারা ধরাশয়ী হচ্ছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমন কর্মসূচি চাইছেন যেন নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারেন। সেক্ষেত্রে সভা-সমাবেশের পক্ষে মত তাদের। পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের যদি কোনো পদক্ষেপ থাকে সেক্ষেত্রে হরতাল-অবরোধ-অসহযোগসহ যে কোনো কর্মসূচি দেওয়া যেতে পারে।

বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু জাগো নিউজকে বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ যেভাবে চলছে এভাবে চলবে। এর থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। গোটা দেশের জনগণসহ গোটা বিশ্ব আওয়ামী লীগের এই ডামি নির্বাচন দেখলো। জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমাদের আন্দোলন থেকে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই। নেতাকর্মীরা যে কোনো কর্মসূচি পালনের জন্য প্রস্তুত। দলীয় হাইকমান্ড যে কর্মসূচি নেবেন সেটাই পালন করবো।’

বাংলাশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা প্রসঙ্গে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন না, বিশ্বের যতগুলো গণতন্ত্রকামী দেশ আছে যারা ডেমোক্রেটিক প্রসেসটা ধরে রেখেছে তারা সবাই বলছেন বাংলাদেশে গত ১০ বছরে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। সেই হত্যা করা ডেমোক্রেসি ফেরত আসুক। শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ গণতন্ত্রকামী সব দেশে চাচ্ছে।’

‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। তারা তো শুধু বিদেশি রাষ্ট্র না, উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে তারা গণতন্ত্র ধারণ করে, লালন করে। তাই তাদের ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ যা লালন করে, আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা ছাড়া প্রত্যেকের কাছেই ভালোভাবে গ্রহণযোগ্য।’

ভোটের পরবর্তী কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোটের পর কী কর্মসূচি হবে, তার জন্য একটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপি জনগণকে সম্পৃক্ত করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আছে। এ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি রাজপথে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম করে যাবে।’