নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা: সদরঘাটে বাড়ছে যাত্রী ও লঞ্চের সংখ্যা

প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট নৌ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। যাত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লঞ্চের সংখ্যাও। পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ শুরু হওয়ায় স্বাভাবিক সময়ে নৌযাত্রীতে ভাটা পড়লেও, ঈদ সামনে রেখে সড়ক-রেলের পাশাপাশি আবারও প্রাণ ফিরেছে সদরঘাট এলাকায়। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের নৌ পথে বাড়ি পৌঁছে দিতে বাড়ানো হয়েছে দৈনিক চলাচলকারী লঞ্চের সংখ্যাও।
আজ রোববার (২৫ জুন) সকাল থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পুরো টার্মিনাল ও পল্টুনজুড়ে যাত্রীদের ভিড়। যাত্রীবোঝাই করে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ঘাট ছেড়ে গেছে। গুলিস্তান-সদরঘাট রাস্তায় যানজটের কারণে ভোগান্তি থাকলেও টার্মিনালে আগেম মতো ভিড় না থাকায় অনেকটা স্বস্তি নিয়েই যাত্রা করছেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøওটিএ) সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার (২৪ জুন) ঢাকা নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ৭১টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আগের দিন (শুক্রবার) এই সংখ্যা ছিল ৬৫টি। যাত্রীর চাপ বাড়ায় ঢাকা-বরিশাল রুট, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটসহ কয়েকটি রুটে বাড়ানো হয়েছে লঞ্চের সংখ্যাও। আজ রোববারও ৭০-৭৫ টা লঞ্চ ঘাট ছাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসায় সদরঘাটে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। গত শুক্রবার ছুটির দিনের তুলনায় শনিবার যাত্রীর চাপ আরও বেড়েছে। সেজন্য কয়েকটি রুটে লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সোমবারের দিকে গার্মেন্টস ছুটি হলে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। যাত্রী টানতে ভাড়াও কম নেওয়া হচ্ছে। ফলে অগ্রিম টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। কিছু কিছু রুটের লঞ্চে ২৯ জুন পর্যন্ত কেবিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।


ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি প্রিন্স আওলাদ এর সুপারভাইজার হৃদয় বলেন, প্রতিদিনই যাত্রীর চাপ বাড়ছে। অগ্রিম বুকিংও হয়েছে ২৮ তারিখ পর্যন্ত। ২৬-২৭ আমাদের কোনও কেবিন ফাঁকা নেই। ঢাকা-ভাণ্ডারিয়া রুটে চলাচলকারী এমভি ফারহান এর স্টাফ সুমন শেখ বলেন, যাত্রীর চাপ বেড়েছে আগের থেকে। গতকালও লঞ্চ ভরে গেছে, আজও সন্ধ্যা থেকেই লঞ্চ যাচ্ছে।
গুলিস্তান থেকে সদরঘাট সড়কে যানজট রয়েছে আগের মতোই। তবে ঘাট এলাকার পরিবেশ অনেকটাই নির্বিঘœ। ফলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। বরিশালগামী যাত্রী মুজাহিদ আলম বলেন, আমি মোহাম্মদপুর থেকে এসেছি। সকাল ১০টায় রওনা করেছি। গুলিস্তানে আসতে ১১টা ১৫। আর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতেই আরও প্রায় ১ ঘণ্টার মতো বেশি লেগেছে। তবে আগেই ফোন করেই টিকিট বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি। তাই কেবিন পাওয়া নিয়ে ভোগান্তি হয়নি। ঘাটেও আগের মতো সেই ভিড় নেই, ফিরতে অনেকটা স্বস্তি বোধ করছি।
ভোলাগামী যাত্রী সুমিত দত্ত বলেন, ঘাটে আগের মতো ভিড় নেই, এসে ডেকেই বসেছি, ডেকেও চাপ কম। ভাড়াও অতিরিক্ত না।
সদরঘাট নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিকুর রহমান খান বলেন, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা নিরাপত্তাবাহিনী সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। পুলিশ, নৌ পুলিশের পাশাপাশি লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় র‌্যাবের একটি টিম আলাদাভাবে কাজ কছে। আনসার সদস্যরাও কাজ করছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছি।
লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল হক ভ‚ঁইয়া বলেন, যাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সেজন্য কয়েকটি রুটে লঞ্চের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও কম নিচ্ছি। আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি যাতে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ হয়। চাহিদামতো লঞ্চের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিআইডবিøওটিএ-এর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সদরঘাট দফতরের যুগ্ম পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘আগের থেকে যাত্রীর চাপ বাড়ছে। যাত্রীর চাপ বাড়লে লঞ্চ প্রস্তুত আছে। মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে আমরা স্পেশাল লঞ্চ দিয়ে দেবো। গতকাল শনিবার ঢাকা নদী বন্দর থেকে মোট ৭১ টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আজ রোববার থেকে লঞ্চ সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ৭০-৭৫ টা যেতে পারে। আগামীকাল সোমবার থেকে গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরি ছুটি হলে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। আমরা তারও প্রস্তুতি রেখেছি। আমাদের মনিটরিং টিম কাজ করছে, যাতে কোনও লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে না ছাড়ে।