
লাইফস্টাইল ডেস্ক :
নারীর স্বাস্থ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটি অবহেলিত বিষয়। যদিও পরিবার এবং সমাজে একজন নারীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে তার স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কম। নারী কাজ এবং পরিবারের দেখাশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকেন, তার করণীয় তালিকা এত দীর্ঘ যে তার সুস্থতা বিঘ্নিত হয়। অনেক গুরুতর রোগ নীরবে অগ্রসর হয় যতক্ষণ না সেগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং চিকিৎসা আরও জটিল হয়ে ওঠে। কিছু রোগ নীরব ঘাতক হয়ে ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে, প্রায় অলক্ষিত থাকে এবং সনাক্ত হওয়ার আগেই অপরিবর্তনীয় ক্ষতি করে। এই অবস্থাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা আমাদের জীবন রক্ষা করার প্রথম পদক্ষেপ। প্রাথমিক রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং জীবনযাপনের পরিবর্তনের মতো সহজ পরিবর্তন জীবন বাঁচাতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এরকম কয়েকটি রোগ সম্পর্কে-
১. হৃদরোগ
হার্ট অ্যাটাক শুধুমাত্র রুষদের ক্ষেত্রে হয় এটি একটি ভুল ধারণা। নারীদের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় নির্ণয় করা হয় না কারণ লক্ষণগুলো সূক্ষ্ম এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি যেভাবে দেখা যায় তার থেকে আলাদা হতে পারে। পুরুষরা সাধারণত বুকে ব্যথা এবং ঘাম অনুভব করে তবে নারীদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো অস্বাভাবিক হতে পারে যেমন ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, চোয়াল বা উপরের পিঠে ব্যথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো অ্যাসিডিটি কিংবা মানসিক চাপের কারণে মনে করে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হয়। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। রক্তচাপ, কোলেস্টেরল সহ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তে শর্করার পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শাক-সবজি, ফলমূল, শস্য সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ঝুঁকি কমাতে পারে।
২. স্তন ক্যান্সার
এটি নারীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সার। ডঐঙ অনুমান করেছে যে প্রতি ২৯ জন নারীর মধ্যে ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যেহেতু প্রাথমিক লক্ষণগুলো স্পষ্ট নয়, তাই ৬০% এরও বেশি নারী অনেক দেরিতে ডাক্তারের কাছে যান। স্তনের আকৃতি, আকার, গঠন, ত্বক বা স্তনবৃন্তের পরিবর্তন, স্তন বা বগলে কোনও পিণ্ড (ব্যথাহীন বা বেদনাদায়ক) হতে পারে সতর্কতামূলক লক্ষণ যা উপেক্ষা করা উচিত নয়। প্রাথমিক সনাক্তকরণ স্তন ক্যান্সারে একটি গেম চেঞ্জার। দ্রুত এবং উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে আমরা প্রায় সম্পূর্ণ নিরাময় করা যায়।
৩. ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার
এটি একটি নীরব ঘাতক কারণ লক্ষণ খুবই অস্পষ্ট এবং মূত্রনালীর সমস্যা বা হজমের সমস্যা বলে ভুল হতে পারে। ক্রমাগত পেট ফুলে যাওয়া, শ্রোণীতে ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্ষুধা হ্রাস হতে পারে সতর্কবার্তা। দুর্ভাগ্যবশত, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য স্ক্রিনিং সরঞ্জাম নেই। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য নিয়মিত ট্রান্সভ্যাজাইনাল স্ক্যান, ঈঅ – ১২৫ এর মতো রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইজঈঅ ১ এবং ২ এর মতো জেনেটিক পরীক্ষা ভবিষ্যতের ক্যান্সারের ঝুঁকি মূল্যায়নে সহায়তা করতে পারে।
৪. অস্টিওপোরোসিস
সাধারণত নারীদের মধ্যে দেখা যায়, বিশেষ করে মেনোপজের পরে। এটি হাড়কে দুর্বল করে দেয় যার ফলে তাদের ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি থাকে। হাড়ের ক্ষয় কখনোই হঠাৎ হয় না, এটি ধীরে ধীরে ঘটে তাই নারীরা লক্ষ্য করতে ব্যর্থ হন এবং পড়ে গেলে নিতম্ব, মেরুদণ্ড এবং কব্জির মতো হাড়ে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিতে পারে। অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ওজন বহনকারী ব্যায়াম, ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুসারে এটি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। মেনোপজের পর প্রতি বছর হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করলে অস্টিওপোরোসিস প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা যায়।
৫. ডায়াবেটিস
জটিলতা দেখা না দেওয়া পর্যন্ত নারীরা বুঝতে পারেন না যে তাদের ডায়াবেটিস আছে। সতর্কতা লক্ষণগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকুন – অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, হঠাৎ ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, ক্লান্তি, ক্ষত সারতে দেরি হওয়া, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি ফেইলিওর, হার্ট অ্যাটাক, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস, স্নায়ুর ক্ষতি, রক্তনালী ব্লক ইত্যাদির মতো অনেক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। প্রাথমিক সনাক্তকরণের জন্য নিয়মিত রক্তে শর্করার পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য। কম চিনি, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিছু গর্ভবতী নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হয়। গর্ভাবস্থায় ঘন ঘন সুগার পরীক্ষা করা জরুরি।