পত্রিকা আর ফেসবুক থেকে নিখোঁজ সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করেন তারা। স্বজনদের ফোন দিয়ে জানানো হয় নিখোঁজ ব্যক্তি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দরকার টাকা। স্বজনরাও যাচাই না করেই পাঠিয়ে দেন টাকা। অথচ পুরোটাই প্রতারণা। আর এভাবেই অন্তত এক হাজার মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের তিন সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মূল হোতা মোস্তাফিজুর প্রতারণার এই কৌশল রপ্ত করেছেন ঝালকাঠিতে তার এক গুরুর কাছে। তিন সদস্যের দলটির একজন পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিখোঁজ সংবাদের তথ্য সংগ্রহ করে। পরে সেখানে থাকা মোবাইল নম্বরে কখনো পুলিশ, কখনো হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় পরিচয় দিয়ে স্বজনদের ফোন দেয় মোস্তাফিজ। আর অন্যজন কান্নার অভিনয় করে বোঝানোর চেষ্টা করে তিনিই সেই নিখোঁজ ব্যক্তি।
কোনো রকমের যাচাই বাছাই ছাড়াই চিকিৎসার জন্য স্বজনরা টাকাও পাঠিয়ে দেন প্রতারকদের ঠিকানায়। আর এভাবেই এক শ্রেণির প্রতারক নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের তথ্য অনুযায়ী অন্তত এক হাজার জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছে তারা।
গ্রেফতারের পর মূলহোতা মোস্তাফিজুর বলেন, ফোন দিয়ে বলি যে আপনাদের রোগী হাসপাতালে আছে। আর আমার সঙ্গে থাকা মুকুল রোগী হওয়ার অভিনয় করে। এতে বিশ্বাস করে অনেকে টাকা দেয়, আবার অনেকে দেয় না।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, মানুষ স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনার কথা শুনলে আবেগপ্রবণ হয়ে দ্রুত টাকা পাঠিয়ে দেয়। এভাবে মোস্তাফিজুর প্রায় এক হাজার লোকের কাছে ফোন করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তার অ্যাকাউন্টে আমরা ১২ লাখ টাকা পেয়েছি।
হারুন অর রশীদ বলেন, কারও কাছ থেকে ৬ হাজার, কারও কাছ থেকে ১০ হাজার করে করে টাকা নিয়েছে চক্রটি। কোনো সময় মোস্তাফিজুর দারোগার অভিনয় করে, কোনো সময় আবার অসুস্থ রোগীর অভিনয় করে।
তাই কেউ ফোন করে এই ধরনের তথ্য দিলে আগে যাচাই করার পরামর্শ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের। তিনি বলেন, কেউ যদি বলে যে আপনার নিখোঁজ ছেলে বা মেয়েকে পেয়েছি। তিনি অসুস্থ। অথবা যদি বলে যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, টাকা পাঠান। যাচাই না করে কেউ বললেই টাকা পাঠিয়ে দেবেন না।