সেলিনা আক্তার:
গরুর মাংস, ডিম, মাছ, মুরগি, আলুসহ বেশ কিছু সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। তবে আগে থেকে অনেক বেশি চড়া প্রায় সব পণ্যের দাম। তাই পণ্যগুলোর দামের নিম্নমুখী প্রবণতা থাকলেও ক্রেতাদের খুব বেশি খুশি করতে পারছে না। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কিছুটা কমলেও অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখনো বেশি। আজ শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
নিত্যপণ্যের বাজারে দেখা গেছে, এখন ঢাকার বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। যা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ে বছরজুড়ে এ আলুর দাম থাকে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। এর অর্থ দাঁড়ায় মানুষ বর্তমান দামের থেকে অর্ধেক দরে আলু খেতে অভ্যস্ত।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে বাজারে আলুর সরবরাহ কম। এরমধ্যে ভারত থেকে আলু আমদানি হচ্ছে। তবে যে পরিমাণে আলু এসেছে, তা চাহিদার তুলনায় খুব সীমিত। ফলে বাজারে তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না। দাম কিছুটা কমে এলেও নাগালের মধ্যে আসেনি।
প্রায় তিন মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে খুচরা পর্যায়ে আলুর দর ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে এ দর কার্যকর হয়নি। উল্টো দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছিল। যা গত সপ্তাহে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর থেকে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। অপরদিকে আমদানির পরও পেঁয়াজের ঝাঁজ বাড়ছেই। আমদানি করা প্রতিকেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভারত থেকে ডিমও আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তারও কিছুটা প্রভাব বাজারে রয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে বেশ কমেছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। এ সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় এক টাকা কমেছে।
পাইকারি ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় উৎপাদন বাড়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। অন্যদিকে, অবরোধের কারণে চাহিদায় কিছুটা টান পড়েছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কমে এসেছে।
খুচরা বাজারে এখন প্রতি পিস ডিম ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি হালি ৪৮ টাকা। এ এক হালি ডিম দুই সপ্তাহ আগে ৫৫ টাকার বিক্রি হয়েছে। এদিকে বড় বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। ডিমের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। এতে দামও কিছুটা কমছে। দুই-তিনটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজি পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। যেখানে ২-৩ সপ্তাহ আগে সবজি যেন আকাশ চড়া দামে উঠেছিল। সে সময় বেশিরভাগ সবজির দর ছিল ১০০ টাকার আশপাশে।
অন্যদিকে, বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ ভালো থাকায় অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কমেছে। মালিবাগ বাজারের মাছ বিক্রেতা এনামুল হক বলেন, গত শুক্রবার থেকে ইলিশ মাছ ধরা শুরু হয়েছে। ইলিশ মাছের সরবরাহ ভালো, দামও কিছুটা কম। যে কারণে অন্যান্য পদের মাছের উপর চাপ কম। ফলে সেগুলোর দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা কেজিপ্রতি কমেছে।
এদিকে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেট ও রসুলপুর ব্রীজ সংলগ্ন গরিবের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংসের দাম আগের তুলনায় কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। দোকানিরা বলছেন, আগে গরুর মাংস সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত এ এলাকাটিতে খেটে খাওয়া শ্রমজীবি দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমানে আয়ের সঙ্গে ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যার ফলে ইচ্ছে থাকলেও কেউ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মাংস ক্রয় করতো না। যার ফলে মাংস বেচা-কেনা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। এতে তাদের আয়-উপার্জনও অনেক কমে গেছে।
তারা আরও বলেন, ক্রেতাদের ক্রয়-ক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই পশুর হাট ও খামার ঘুরে কম দামে গরু কিনে দোকানে তুলে তা কম দামেই বিক্রি করছেন। তবে নিজেদের সীমিত লাভ রেখে মাংসের দম কমিয়ে এখন কেজিপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতারা বলছেন, মাংসের দাম কম রাখলেও বিক্রেতারা ক্রেতাদের ঠকাচ্ছেন। এর কারণ হিসেবে ভোক্তারা বলেন, মাংসের দাম কম রাখলেও এর পেছনে কারসাজি রয়েছে। গরুর মাংস কিনতে গেলে সলিড মাংস দিচ্ছে না। প্রতি কেজি মাংসের সঙ্গে হাঁড় কলিজা, গুরদা ও ফেপসাসহ চামড়ার উচ্ছিষ্ট মাংস মিশিয়ে দিচ্ছে। একইসঙ্গে ওজনেও কারচুপি করা হচ্ছে। তাই মাংস কেনা কমিয়ে দিয়েছেন ক্রেতারা। রনি মার্কেটের অধিকাংশ মুরগির দোকানে ব্রয়লার মুরগি বিক্রিতে ওজনে কারচুপি করা হয়। প্রতিকেজি মুরগিতে ২০০ গ্রাম কম দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি তদারকির অনুরোধ জানিয়েছেন ভোক্তারা।
এদিকে বাজারে আবারও উত্তাপ শুরু হয়েছে চিনির দামের কারণে। ৮ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে পণ্যটির দাম। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, ডিলার পর্যায়ে (পাইকারি) প্রতি কেজি চিনির দাম রাখা হচ্ছে ১৩৬-১৩৮ টাকা। খুচরায় প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাও লাভ হচ্ছে না। যে কারণে অনেকে এখন চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।