নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তনের আহ্বান

প্রকাশিত: ১২:০৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর প্যাকেজ ভ্যাট ব্যবস্থা প্রবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বারের নেতারা।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত মতবিনিময় সভা এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

অসহনীয় যানজট, জলাবদ্ধতা, অপ্রতুল অবকাঠামো, এসএমই খাতে অপর্যাপ্ত ঋণ প্রবাহ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, ডলারের মূল্যের অস্থিরতা, আমদানি-রফতানি ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা, উচ্চ সুদহার, ভ্যাট ও করের হার বৃদ্ধি এবং জটিল রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীর ব্যবসার অন্যতম বাণিজ্যকেন্দ্র পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সাম্প্রতিক সময়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন। বিদ্যমান সমস্যাগুলোর আশু সমাধানে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

মতবিনিময় সভা লালবাগের মীম কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে পুরান ঢাকার বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্টস ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সেলিম আল মামুন, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকা (দক্ষিণ)-এর অতিরিক্ত কমিশনার মানস কুমার বর্মন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মো. জসীম উদ্দিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা, ব্যবসার আকার, প্রকৃতি ও সক্ষমতা অনুযায়ী করা ব্যবস্থার সহজীকরণ, আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা নিরসন, বাস্তবভিত্তিক ভ্যাট হার নিধারণের ওপর জোরারোপ করেন।

তিনি বলেন, শতবছর ধরে পুরান ঢাকা ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্রস্থল হলেও যানজট, অবকাঠামোর অপ্রতুলতা এবং কর ও ভ্যাটের প্রতিবন্ধকতার কারণে এখানকার উদ্যোক্তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, যা নিরসনে সরকাররি-বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্টস ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. সেলিম আল মামুন বলেন, ২০২২-২৪ পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে ডলারের মূল্য ৩৫ শতাংশ অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণে ডলারের মূল্য অস্বাবাভিক হারে বেড়ে যায় এবং মুদ্রাব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা পরিলক্ষিত হয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি জানান, গত ৬ মাসে আমদানি ও রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৩.৫ শতাংশ এবং ১০.৯ শতাংশ এবং গত ৭ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি আরও বলেন, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করেছে।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকার (দক্ষিণ) অতিরিক্ত কমিশনার মানস কুমার বর্মন বলেন, সরকার ভ্যাট ব্যবস্থা সহজীকরণের জন্য ভ্যাট অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ব্যবস্থা অটোমেটেড করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, ফলে ব্যবসায়ীরা হয়রানি হতে মুক্ত হবেন।

ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) জসীম উদ্দিন বলেন, পুরান ঢাকার যানজট নিরসনে ৮টি গুরুত্বপূণ স্থানে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হবে, তবে এদের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগে ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ডিসিসিআইর সাবেক পরিচালক মনোয়ার হোসেন করের হার কমিয়ে করের আওতা বাড়ানোর ওপর জোরারোপ করেন।

ডিসিসিআইর প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিক্রি ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, এমতাবস্থায় কর ও ভ্যাটের উচ্চ হার এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে আমরা ক্রমশ ক্ষতির মুখোমুখী হচ্ছি।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, বর্তমানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এলসি মাজিন ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হ্রাস করা প্রয়োজন। এছাড়া অর্থবছরের মাঝে এসআরও জারি করে শুল্কহার পরিবর্তন করলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন।

ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং সাবেক সভাপতিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে ৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআইর সদস্যপদ প্রদান করা হয় এবং ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির হাতে ডিসিসিআই’র মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন।