নিম্নমানের ইটের খোয়ায় চলছে সড়ক সংস্কার

প্রকাশিত: ১২:১৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় ঝিটকা-রামকৃষ্ণপুরে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করে চলছে সড়ক সংস্কার কাজ। দীর্ঘদিন পরে সড়কটি সংস্কার করা হলেও বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলে দাবি করছেন এলাকাবাসীর

জানা গেছে, নিম্নমানের এসব ইটের খোয়া পরিবর্তন করে ভালো মানের খোয়া ব্যবহারের জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করেই সড়ক সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

হরিরামপুর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ঝিটকা-রামকৃষ্ণপুর সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বেহাল হয়ে পড়েছিল। এতে এলাকার সাধারণ মানুষসহ যানবাহন চলাচল ব্যাহত হতো। জনস্বার্থে ২ হাজার ৬০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়। পরে সড়কটির সংস্কার কাজ পায় ঘিওর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিকের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর কনস্ট্রাকশন। সরকারি অর্থায়নে সড়কটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী চলতি মাসের ১০ মার্চ সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটি সংস্কারের জন্য সড়কে ফেলা হয়েছে নিম্নমানের ইটের খোয়া। এসব খোয়ার ওপর দিয়ে অটোবাইক কিংবা রিকশা চলাচল করাতেই সেগুলো ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে। এর সঙ্গে মেশানো রয়েছে ঝামা। নিম্নমানের খোয়াকে পিকেট বোঝাতেই ঝামাগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, ইটভাটা থেকে ট্রলিতে করে খোয়াগুলো এনে ফেলা হয়েছে। এগুলোর মান একেবারেই খারাপ।

অটোচালক সেন্টু মিয়া বলেন, এই রাস্তাটি অনেক দিন ধরেই খারাপ ছিল। তয় এখন রাস্তা ভালো করতাছে এটা খুবই ভালো আমাগো জন্য। কিন্তু দুই নাম্বার খোয়া দিয়া কাজ করতাছে, তাতে রাস্তা বেশি দিন টিকব না।

স্থানীয় বাসিন্দা শুকুর আলী বলেন, বাবা এগুলো কি খোয়ার মধ্যে পড়ে। সব দুই নাম্বার খোয়া দিয়া কাজ করতাছে। আমরা ওদের (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোক) অনেক বলছি, রাস্তার কাজটা মেলাদিন পরে হইতাছে, তোমরা ভালো মানের খোয়া দিয়া কাজ করো। কিন্তু কে শুনে কার কথা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীর কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী ও ঘিওর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মীর মানিকুজ্জামান মানিক মোবাইল ফোনে বলেন, এখানে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করা হয়নি। স্বাধীনের ইটভাটা থেকে এই খোয়াগুলো আনা হয়েছে।

সড়কটির সংস্কার কাজের তদারকি দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা তোয়াক্কা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি রাস্তার কাজে কোন খারাপ মানের খোয়া ব্যবহার করছি না। আমার কপাল খারাপ যে, লটারিতে এই কাজটি আমি পাইছি।

হরিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মাজহারুলক হক আকন্দ বলেন, সড়ক সংস্কারের কাজে নিম্মমানের বা মানহীন কোনো ইটের খোয়া ব্যবহারের সুযোগ নেই। যদি এ রকম হয়ে থাকে তাহলে আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সেগুলো পরিবর্তন করে ভালো মানের খোয়া ব্যবহার করার জন্য বলা হবে।

মানিকগঞ্জের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ বি এম খোরশেদ আলম বলেন, অবশ্যই করণীয় আছে। আপনার মাধ্যমে আমাদের কাছে ম্যাসেজটি এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এখানকার কোয়ালিটি কন্ট্রোলারকে পাঠাব। ঝিটকা-রামকৃষ্ণপুর সড়ক সংস্কার কাছে নিম্নমানের খোয়া ব্যবহার করে থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।