নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা চলছেই

প্রকাশিত: ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৪

এসএম দেলোয়ার হোসেন:

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা টানা ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি উপেক্ষা করে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে ৩০০ আসনে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছে। রাজধানী ঢাকার কোথাও সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও দেশের কয়েকটি স্থানে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সিলেটের সুনামগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন পরবর্তী দুই পক্ষের সংঘর্ষে দোয়ারাবাজার উপজেলার নৈনগাঁও ও মাছিমপুর গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ঘটনার পর এলাকায় পুলিশি টহল ও নিরাপত্তা জোরদ;ার করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচন পরবর্তী যে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা ও নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নির্বাচন পরবর্তী দেশের কোথাও কোনো সহিংসতা বা নাশকতার আশঙ্কা দেখা দেয়, এমন তথ্য যদি কারো কাছে থেকে থাকে, তারা যেন জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ অথবা নিকটস্থ থানা পুলিশকে অবহিত করেন। একই সঙ্গে নাশকতাকারীসহ যেকোনো ধরনের অপরাধীদের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য দিলে তার নাম পরিচয় গোপন রাখাসহ পুরস্কৃত করার হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে দেশেও কোথা বড় ধরণের কোনো নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচন পরবর্তী যে কোনো ধরনের সহিংসতা-নাশকতামূলক কর্মকাÐ দমনে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ-৫ আসনের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোয়ারাবাজার মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিক ও স্বতন্ত্র ‘ঈগল’ প্রতীকের প্রার্থী শামিম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে জাল ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে নির্বাচনের পর পরই সংঘর্ষে জড়িয়েছেন ‘ঈগল’ ও ‘নৌকা’ প্রতীকের সমর্থকরা। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পুরো এলাকা মুহূর্তেই রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বর্তমানে সেখানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সালেহীন খান সবুজ বাংলাকে বলেন, গতকাল বুধবার উপজেলা পরিষদের পাশে নৈনগাঁও মুরাদপুর ও মাছিমপুর গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সকাল থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ এসে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আহতদের দোয়ারাবাজার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছে।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি তদন্ত সামছ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে সবুজ বাংলাকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। সংঘর্ষের এ ঘটনায় ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দত্তেরবাজারের বিরই গ্রামে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ককটেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে তার ছেলে লিটন মিয়া (৪৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাগলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খায়রুল বাশার বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিস্ফোরণের আলামত জব্দ করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গফরগাঁও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজা নাজনীন সবুজ বাংলাকে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। তবে আলামতগুলো গুলির নাকি বিস্ফোরকের (ককটেল) তা জানার চেষ্টা চলছে। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে দত্তের বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিনের বাড়িতে আগুন আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে জালাল উদ্দিনের বসতঘরের চারটি কক্ষ পুড়ে যায়।
এদিকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার পূর্বভাকুম এলাকায় নিজ বাড়ির উঠানে কর্মীসভায় মানিকগঞ্জ-২ আসনের পরাজিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মমতাজ বেগম বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছেন।
এদিকে গতকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে পটুয়াখালীর দশমিনায় নিজ বাসভবনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের অব্যাহত ভয়ভীতি, হামলা, মারধর ও হত্যার হুমকির প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সিকদার গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইকবাল মাহমুদ লিটন। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের কালিহাতীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
গতকাল বুধবার রাতে এ রিপোর্ট লেখাপর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর সবুজ বাংলাকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। অনেকটাই অভ্যন্তরীন ও পূর্ব শত্রæতার জেরে সহিংসতা ঘটছে। ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। নির্বাচনের আগেই নিরাপত্তার বিষয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্তব্যরত পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যা অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা বা নাশকতামূলক কর্মকান্ড কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। নির্বাচন পরবর্তী যে কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতা বা নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঠেকাতে এখনো প্রস্তুত রয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। একই সঙ্গে নাশকতাকারীসহ অন্যান্য অপরাধী ধরতে সারাদেশে অভিযান চলছে। কোথাও নাশকতামূলক কর্মকান্ড এমনিক সহিংসতার শঙ্কা থেকে থাকলে তাৎক্ষণিক যাতে ৯৯৯ এ অথবা নিকটস্থ থানায় অবহিত করার আহŸান জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।