নৌকার জন্য ৫ টাকা দেওয়া সেই কামবালা পেলেন ঘর
নাম বসলো সড়কেও
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার জন্য পাঁচ টাকা দেওয়া সেই কামবালাকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে তার নামে একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। ঘর ও সড়কের উদ্বোধন শেষে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেছেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ‘কামবালা হলেন ভোটার অফ দ্য ইলেকশন’।
রবিবার (২ জুন) দুপুরে দিনাজপুর বিরল উপজেলার ভূমিহীন ৯২ বছর বয়সী কামবালার বাড়ি ও তার নামে সড়কের উদ্বোধন করেন প্রতিমন্ত্রী। এ সময় দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার ইফতেখার আহমেদ, বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমাকান্ত রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারে নির্বাচনি পথসভায় গিয়েছিলেন তখনকার দিনাজপুর-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। প্রচারণার সময় শত শত মানুষের ভিড় ঠেলে প্রার্থীর কাছে যান ৯২ বছর বয়সী কামবালা। এ সময় প্রার্থী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নির্বাচন করার জন্য পাঁচ টাকা দিয়েছিলেন। ভূমিহীন ও সহায়-সম্বলহীন বলেছিলেন, ‘মোর সামর্থ্য নাই, এই অল্প পরিমাণ টাকা যেন নৌকা মার্কার ভোটের কাজও খরচ হয়। তুই মোর এই টাকাটা দিয়া ভোটের কাজ করিস। তুই নৌকা মার্কাত ভোট দিস আর নৌকা মার্কার ভোট চাইস। যাতে করি, নৌকা মার্কা জিতিবার পারে। মুই নিজেও সবার কাছে নৌকার জন্য ভোট চাহিয়া বেড়াছু।’
তখন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ওই ব্যক্তিকে একটি ব্যাজ দেন। কিন্তু কামবালা সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘মুই বঙ্গবন্ধুক চিনো, এইটা তুই অন্য কাহোকো দিস। আর তাক কহিস, যাতে করি বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কাত ভোটটা দেয়। মুই আর কিছু চাহো না।’
কামবালার এই কথা শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যদি আমি নির্বাচিত হই তাহলে আপনার বাড়িতে যাবো।’
৭ জানুয়ারির ভোটের নির্বাচিত হওয়ার পর ২৮ জানুয়ারি ধর্মপুর ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ গোদাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত কামবালার বাড়িতে যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। ঘরের সামনে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন কামবালা। ঘরের সামনেই কামবালাকে একটি শাল, শাড়ি, শীতের সোয়েটার ও বাঁধাই করা দুটি ছবি উপহার দেন প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু কামবালার নিজের কোনও বাড়ি ছিল না। ভূমিহীন এই ব্যক্তি যে বাড়িতে থাকতেন সেই বাড়ির ঘরে বসার জায়গা ছিল না। তিনি খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে বাড়ির আঙিনায় বসতে দেন। তিনি বলেন, ‘বেটা তুই মোর বাড়িত আইচ্ছি, কিন্তু মোর ঘরত বসিবার জায়গা নাই। আগিনাতে বস।’ কামবালার এমন অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণা দেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
যে মানুষের ভোটের প্রতি এত আস্থা, বঙ্গবন্ধুর প্রতি এত ভালোবাসা সেটাকে অম্লান করে রাখতে কামবালার তিন ছেলের জন্য তিনটি বাড়ি ও তার বাড়িতে যাওয়ার সড়কের নামকরণ করেন ‘কামবালা সড়ক’।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার কাজ করেছি। নির্বাচনে ভোট চেয়েছি। কিন্তু এবার আমার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো, ভোটার প্রার্থীর কাছে ভোট চান। তার দেওয়া টাকা যেন নির্বাচনি কাজে ব্যয় করি। তার বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধুর নৌকার প্রতি ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি, কামবালা হচ্ছে এই নির্বাচনের ভোটার অব দ্য ইলেকশন। তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন এটা শুধু ভোটের বিষয় না, এটা অত্যন্ত শিক্ষণীয় বিষয়। একটি ভোট জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, দেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে পারে, একটি জনগোষ্ঠীকে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে তুলে আনতে পারে। ১৯৭০ সালে যে নির্বাচন হয়েছিল সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নৌকা মার্কার প্রতীক নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছিলেন। মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একক নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। সেই বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলার মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দেন নাই, স্বাধীন-সার্বভৌমত্ব একটি দেশ দিয়ে গেছেন। স্বাধীনতার কথাটি আমাদের সঙ্গে তিনি মিশিয়ে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। মানুষকে নির্যাতন-নিপীড়ন করে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, লুটেরা-দুর্নীতিবাজ কায়েম করে মানুষকে সর্বস্বান্ত করেছে। বাংলাদেশের মানুষের কোনও স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। প্রধান বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সেই সন্ত্রাসবাদকে চ্যালেঞ্জ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন। দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে গেছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।’
কামবালা বলেন, ‘মোক একখান ঘর দিছে। আইজ মোক নিয়া ওই ঘরত গেছিল মন্ত্রী। ওইটা মোর ছোয়াল। আইজকা মোর অনেক কাজ। এখন মোর সবকিছু ওই ঘরত নিয়া যাইম। ওই বাড়িত মুই থাকিম। মোক খুব ভালো ও আনন্দ লাগিছে। কিন্তু মোর বেটাটা (খালিদ মাহমুদ চৌধুরী) কিছু না খাই গেল। এত ভিড়, এত মানুষ। মোর বেটাটা আসি মোক এই ঘরটা দিল। খুব ভালো লাগিছে।’