পটুয়াখালী-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আ স ম ফিরোজ 

প্রকাশিত: ৭:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২৩

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

একটি মাত্র উপজেলা বাউফল নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী দুই সংসদীয় আসন আওয়ামী লীগের দৈর্ঘ্য হিসেবে পরিচিত আসনটি।

স্বাধীনতার পর থেকে এই আসন ধরে রেখেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এই আসন থেকে সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষীয়ান  রাজনীতিবিদ অ স ম ফিরোজ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হতে যাচ্ছে তাকে ঘিরে। পরিচিতি রয়েছে ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে। সাংগঠনিক দক্ষতার যোগ্যতা এবং ভক্ত অনুসারী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকে বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করেছেন সংসদের হুইপ, চিপ হুইপ ও প্যানেল স্পিকার।

এছাড়াও একাধিক সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে ছিলেন। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রের মধ্যে, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে সাংগঠনিক শক্তি ও এলাকার জনপ্রিয়তা বিবেচনায় অ স ম ফিরোজ নৌকার প্রতীক মনোনয়ন পাবেন। দলীয় সূত্রে জানা যায় ১৯৭৯ সালে প্রথমবার নৌকার প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ওই বছর তিনি বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার নেতৃত্বে গুনে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠিত। তিনি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। এপর্যন্ত ৯ বার দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। যার মধ্যে ৭৯, ৮৬, ৯১, ৯৬, ০৮, ১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি নবম জাতীয় সংসদের হুইপ ও দশম জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ সংসদের সংসদীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি ও তিনি। উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সেল সূত্রে জানায়, ৪৪ বছর ধরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। উপজেলা, পৌর ও ১৫টি ইউনিয়ন এবং এর আওতাধীন ১৪৪টি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সহ সহযোগী সংগঠনের কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির সর্বনিম্ন ৫১ সদস্য বিশিষ্ট। যাতে ৬৬ হাজার নেতাকর্মী রয়েছেন। এর বাইরে ও রয়েছেন বিশাল আওয়ামী সমর্থক। উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান দুই ডজন জেলা পরিষদ সদস্য ও দশটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ অসংখ্য বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্য তার অনুসারী। তা সাংগঠনিক ভিত শক্তিশালী। এইদিকে নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে গত ডিসেম্বর থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সমন্বয় কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আ স ম ফিরোজ এমপি। তিনি তার বক্তব্যে নারী উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদান ও দেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চান। উপস্থিত নারীরা নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দলীয় নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী দুই বাউফল আসনে আসাম ও ফিরোজকে প্রধান্য দিয়েই নির্বাচনি চক সাজানো হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে কমিটি গঠন করে তা দপ্তরের জমা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের ব্যাপক জনপ্রিয় তিনি। উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত সব পর্যায়ে নেতাকর্মীর সঙ্গে প্রতিনিত যোগাযোগ রয়েছে তার। এই কারণে দলের একক প্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন তিনি। কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ বলেন, আ স ম ফিরোজ এমপি ৪৫ বছর ধরে এই জনপদে বিচরণ করে আসছেন। সব পর্যায়ের নেতাকর্মী সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছেন। নির্বাচনে তার বিকল্প নেই।  দল তাকে মনোনয়ন দিবেন এবং তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। দুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ধুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হুমায়ুন কোভিদ বলেন তিনি একজন সফল রাজনীতিবিদ। যার রাজনীতি জীবনে কোন কলঙ্ক নেই। তিনি স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। তান নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং শেখ হাসিনাকে নৌকা বিজয়ী উপহার দিবেন। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ সদস্য শাহজান সিরাজ বলেন ছাত্র জীবন থেকে আ সা ম ও ফিরোজ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বরিশাল বিএম কলেজের দুইবারের ভিপি ছিলেন। ৭৯ সালে তিনি প্রথমবার যখন এমপি নির্বাচিত হয় তখন সংসদের সর্বকনিষ্ঠ এমপি ছিলেন। আজ তিনি সংসদের অন্যতম বর্ষীয়ান সংসদ সদস্য। যা সম্ভব হয়েছে তার রাজনৈতিক দক্ষতায়। তার দক্ষতা যোগাযোগ ও সততার বিবেচনায় আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে তিনি নৌকার কান্ডারী হবেন। এবং আসনটি শেখ হাসিনা কে অষ্টমবারের মতো উপহার দিবেন । শুধু সাংগঠনিক ভিত নয় জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছেন এই সংসদ সদস্য। দীর্ঘ সময় তিনি বাউফল উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। বাউফলে যা উন্নয়ন হয়েছে সমস্ত কিছু তার হাত ধরেই। উপজেলায় তার প্রচেষ্টায় ২২০০ কিলোমিটারের পাকা সড়ক করা হয়েছে। এছাড়া তিনি অসংখ্য সেতূ,  কালভার্ট, মসজিদ, মন্দির ঘাট ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। চারতলা উপজেলা পরিষদ ভবন, মডেল মসজিদ, উপজেলা পরিষদ হলরুম, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নার্সিং ইনস্টিটিউট কলেজ, ৬৬ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৭টি মাদ্রাসা ও ২৪৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ আয়ন হয়েছে। তেতুলিয়া নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্ন চন্দ্র দ্বীপ ইউনিয়নকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা করেছেন। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাও করেছেন তিনি। রাস্তাঘাট, ব্রি্‌জ, ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে পিছিয়ে পাড়া ইউনিয়নে। চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, চন্দ্রদ্বীপ একটি অবহেলিত জনপদ যার চারপাশে তেতুলিয়া নদী। আ স ম ফিরোজ এমপি এই জনপদেকে ইউনিয়ন হিসাবে মর্যাদা দেন। আজ চন্দ্রদ্বীপ তার হাত ধরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। চন্দ্রদ্বীপের মানুষের জীবনমান বদলে গেছে। বাউফলের উন্নয়ন, তার সততা, স্বচ্ছতা, আদর্শ, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চর্চার কারণে তিনি সব শ্রেণীর মানুষের কাছে জনপ্রিয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শামসুল আলম মিয়া বলেন আওয়ামী লীগ মুক্তি যুদ্ধে স্বপক্ষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসেন তখনই মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করেন। তিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখ যুদ্ধ করেছে।  মুক্তিযুদ্ধে ৯ নং সেক্টরে শিব পলিটিক্যাল মাটিভেটর ছিলেন। তিনি বাউফল এর মুক্তিযোদ্ধার অনেক উন্নয়ন করেছেন। বিড়ি নিবাস দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করেছেন। অস্বচ্ছ মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সহায়তা করে থাকেন। আগামী নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধারা তার সঙ্গে আছেন। কালিকুড়ি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ন্যাছার উদ্দিন শিকদার জামাল বলেন, তিনি একজন শিক্ষক ও শিক্ষা বন্ধক নেতা। শিক্ষার মান উন্নয়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে তিনি কেন্দ্রে কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন করেছেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা পরিদর্শন সহ শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন তিনি। উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুক হোসেন বলেন অ স ম ফিরোজ বাউফল আওয়ামী লীগের বটবৃক্ষ। তার ছায়াতলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা নিরাপদ। তিনি যেমন কর্মীবান্ধব তেমনি দক্ষ সংগঠক। আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কার মাঝি হবেন এবং জয়লাভ করবেন বিপুল ভোটে। আমরা দলীয় নেতাকর্মীরা নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে মাঠে থেকে কাজ করব। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন খান বলেন তিনি দীর্ঘদিন থেকে এই জনপদে রাজনীতি করেছেন। তার হাত ধরেই বাউফলে সকল উন্নয়ন হয়েছে। এখনো অসংখ্য উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আগামী দিনের দিনে আবারও এমপি নির্বাচিত হবেন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবি নিশাদ বলেন অ স ম ফিরোজ বিএম কলেজ ছাত্রলীগের সংগঠক ছিলেন । ৭৯ সালে প্রথমবার বাউফল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের দুর্গে পরিণত করেছেন। তার হাত ধরে বাউফল আওয়ামী লীগ নিরাপদ। দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণের অস্থায়ী তিনি অপ্র প্রতিদ্বন্দ্বী।

নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আ স ম ফিরোজ এমপি বলেন আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের সংবিধান মেনে অনুষ্ঠিত  হবে।নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটি অবাধ সুস্থনিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবেন। বিএনপি উচিত সংবিধান মেনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। যদি তারা ২০১৬-২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে তাদেরকে পস্তাতে হবে।  তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দল আমাকে ৯ বার মনোনয়ন দিয়েছে যার মধ্যে ৭ বার নির্বাচিত হয়েছি। একবার নির্বাচন হয়নি আরেকবার প্রশ্নে নির্বাচনে আমাকে হারানো হয়েছে। আগামী দিনে দলের জন্য কাজ করে যাব। দলও আমাকে যথাযথ মূল্যায়ন করবে।