পরীমণি ও পিয়াসার সঙ্গে ২১ প্রভাবশালীর সখ্য

প্রকাশিত: ৩:০৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৮, ২০২১

চিত্রনায়িকা পরীমণি ও মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাইবাছাই করছে সিআইডি (অপরাধ তদন্ত বিভাগ)। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের রেকর্ডও উদ্ধার হয়েছে। সিআইডি তাদের ফেসবুক, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসআপ ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। তাদের মোবাইল ফোন থেকে প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তির অডিও রেকর্ড ও ভিডিও ফুটেজ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ভিডিও ফুটেজ ও অডিও রেকর্ড দিয়ে পরীমণি ও পিয়াসা প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।

‘বাসায় মদের খালি বোতল দেইখাই চরিত্র বুইঝা ফেলেন?’

সিআইডির সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার রাতে পরীমণি, পিয়াসা, হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ গ্রেফতার ছয় জনের বাসায় সিআইডি অভিযান চালিয়েছে। বারিধারায় পিয়াসার বাসায় অভিযান চালিয়ে তার ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, ‘চিত্রনায়িকা পরীমণি, মডেল পিয়াসা ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীর ইস্যুতে দায়ের হওয়া মামলাগুলো সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবে তদন্ত করা হবে। তদন্তে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নাম এলেও তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। জড়িত সবার বিরুদ্ধেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সিআইডি। শুক্রবার চিত্রনায়িকা পরীমণি, ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর, প্রযোজক রাজ, মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের সাতটি মামলা আমাদের (সিআইডি) কাছে এসেছে। আসামিদের আমরা হেফাজতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে। এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, আইনের মধ্যে থেকেই মামলা তদন্ত করবে সিআইডি। সুষ্ঠুভাবে তদন্তকাজ সম্পন্ন হবে। যারা সত্যিকারভাবে দোষী, সিআইডি তাদের খুঁজে বের করবে।’

শিল্পী সমিতির সদস্য পদ হারাচ্ছেন পরীমণি

মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে পরীমণি, পিয়াসা, হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ প্রত্যেককেই পৃথক কক্ষে রাখা হয়েছে। গতকাল তাদের পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সিআইডি।

মডেল পিয়াসার সঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মোবাইল ফোনে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড উদ্ধার হয়েছে। একটি ইনসিওরেন্সের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের গোপন ভিডিও রয়েছে। পিয়াসার সঙ্গে একজন অলংকার ব্যবসায়ীর বেশ কয়েকটি অডিও রেকর্ড পেয়েছে সিআইডি।

পিয়াসার জালে ছিল শতাধিক উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান

একটি অডিও রেকর্ডের উদ্ধৃতি দিয়ে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে পরীমণির অডিও রেকর্ডে একটি গাড়ি উপহার দেওয়ার কথা রয়েছে। একই সঙ্গে ঐ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরীমণির গভীর সখ্যের বিষয়টি কথোপকথনে উঠে এসেছে। বাংলাদেশে বাংলাদেশে একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের সঙ্গে পরীমণির মোবাইল ফোনে কথা হতো।

অন্যদিকে ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রেমস বাওয়ানীর সঙ্গে পিয়াসার একটি ক্লাবে সময় কাটানোর ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। গুলশানে একটি দামি ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রির শোরুমের মালিক ইবনুল হাসান খোকনের সঙ্গে পরীমনি ও পিয়াসার বহুবার কথোপকথন হয়েছে মোবাইল ফোনে। মদ বিক্রির দোকানের মালিক রানা শফিউল্লাহর সঙ্গে পিয়াসার লংড্রাইভে যাওয়ার কথোপকথন রয়েছে। বাংলাদেশে গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিটার সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ ডনের সঙ্গে পিয়াসার হোয়াটসআপে বেশ কয়েকবার কথোপকথন হয়েছে। হাবুিল্লাহ ডনের মালিকানাধীন গুলশানের গাড়ির শোরুম অটো মিউজিয়ামে চোরাই গাড়ি বিক্রি হয়। মডেল পিয়াসা ঐ চোরাই গাড়ি সিন্ডিকেটের সদস্য। অটো মিউজিয়াম থেকে পিয়াসার সহযোগী মিশুর চুরি করা একটি গাড়ি উদ্ধার করেছে র‌্যাব।

সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল ফোন ও ফেসবুক আইডি তল্লাশি করে প্রভাবশালী ২১ ব্যক্তির সঙ্গে পিয়াসা, পরীমণি ও মৌয়ের যোগাযোগ থাকার তথ্য মিলেছে। এর বাইরে পিয়াসার মোবাইল ফোনের কললিস্টে বেশ কয়েক জন ব্যবসায়ীর মোবাইল নম্বর পাওয়া গেছে। ঐ সব ব্যবসায়ীকে পিয়াসা ফোন করে ব্ল্যাকমেইলিং করতেন।

অন্যদিকে গতকাল সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা হোক বা যে কেউ হোক। আমরা চাই নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সত্য ঘটনা উদ্ঘাটন করতে। তারা যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন, আইনের আওতায় আসতে হবেই।’ পরীমণির সঙ্গে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) গোলাম সাকলায়েনের অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করব। সে কারণে মামলাসংক্রান্ত এবং আসামিসংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন মাধ্যম ও গণমাধ্যমে যা প্রকাশ পাবে, সে বিষয়গুলো তদন্তে আসামি ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

জিমি তিন দিনের রিমান্ডে

বনানী থানার মাদক মামলায় পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. আব্দুস ছোবাহান জিমিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।