চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামে এবার কোরবানিতে চাহিদার থেকে প্রায় ৩৪ হাজার পশু কম রয়েছে। এবারে ৮ লাখ ৮৫ হাজার পশু প্রয়োজন। কিন্তু প্রস্তুত রয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার। পার্বত্য জেলাগুলো থেকে ঘাটতি থাকা পশুর চাহিদা পূরণ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খামারিরা বলছেন, গত বছর চট্টগ্রামে প্রয়োজন ছিল ৭ লাখ পশু। এবারে ১ লাখ ৮৫ হাজার চাহিদা বেড়েছে। চট্টগ্রামে প্রস্তুত থাকা পশু থেকে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হবে। তবে এবার পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কোরবানির বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে এবার সম্ভাব্য কোরবানির পশুর চাহিদা ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৭৫টি গরু, ৭১ হাজার ৩৬৫টি মহিষ, ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩টি ছাগল, ভেড়া ৫৮ হাজার ৬৯২টি ও অন্যান্য পশু ৮৮টি। এর বিপরীতে কোরবানির জন্য পশুর মজুত হয়েছে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি পশু। ফলে ৩৩ হাজার ৪০৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে।
প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের পশু খামারগুলো থেকে স্থানীয়ভাবে পশুর চাহিদা পূরণ হবে। চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০ হাজার খামার রয়েছে। কয়েক বছরে চট্টগ্রামে গরুর খামারের বেশ বিস্তার ঘটেছে। বাজারে দাম পাওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন এই ব্যবসার দিকে। বহু শিক্ষিত যুবকও খামার গড়ে তুলে শত শত পশু মোটাতাজা করছেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এবার চট্টগ্রামে ৮ লাখ ৮৫ হাজার পশু প্রয়োজন। সেখানে সাড়ে ৮ লাখ পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে পাশের পার্বত্য জেলা থেকে ঘাটতি পূরণ হবে।’
ঘাটতি থাকলেও চট্টগ্রামে এবার পশুর কোনো অভাব হবে না বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমদানির প্রয়োজন নেই। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকেও চট্টগ্রামে প্রচুর গরু-মহিষ আনা হয়। বাজারে কোনো ধরনের সংকট পড়বে না।’
চট্টগ্রাম ডিভিশনাল ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণের জন্য খামারিরা সক্ষম। খামারের মোটাতাজা হওয়া পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ হবে। এরপরও কোরবানির বিশাল বাজার নিয়ে একটি চক্র সবসময় সক্রিয় থাকে। তারা বিদেশ থেকে পশু আমদানি এবং চোরাপথে পশু এনে দেশের খামারিদের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে বছর কয়েকের মধ্যে বিকশিত হওয়া বিরাট খাতটি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
হোমল্যান্ড ডেইরি ফার্মের মালিক ও চট্টগ্রাম ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মালেক মোহাম্মদ ওমর বলেন, ‘আমার নিজের খামার থেকে ৬০-৭০টি ষাঁড় বিক্রি করব। আমার খামার মূলত দুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। লালনপালন করা গরু-বাছুর থেকে ষাঁড়গুলো মোটাতাজা করে প্রতিবছর বিক্রি করি। এভাবে সব খামারিই ষাঁড়গুলো বিক্রি করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রচুর গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কোরবানির বাজার নিয়ে উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠার কিছু নেই। প্রয়োজন মেটানোর মতো সক্ষমতা চট্টগ্রামে এই খাত অর্জন করেছে।’
চট্টগ্রামের নাহার অ্যাগ্রো লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ তানজিব জাওয়াদ রহমান জানান, ‘কোরবানি উপলক্ষ্যে আমাদের খামারে ৫ শতাধিক গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। আমরা গরু বিক্রি শুরু করেছি। কিছু গরু বিক্রি হয়েছে। পশুখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারে। বায়েজিদ লিংক রোডে অবস্থিত খামারে গরুগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। অনলাইনেও অনেকে বুকিং দিচ্ছেন। এ ছাড়া এখন কিনলে কোরবানির আগের দিন পর্যন্ত গরু আমাদের কাছে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে।’