পাওনা টাকার জন্য কবর খুঁড়ে দেনাদারের লাশ উত্তোলনের চেষ্টা

প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০২৩

রংপুর প্রতিনিধি:

এবার লাশ আটকে রাখা নয়, পাওনা টাকার দাবি করে কবরস্থানে ঢুকে কোদাল দিয়ে কবর খুঁড়ে দেনাদার মৃত এক নারীর লাশ উত্তোলনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। এসময় ওই কবরস্থান ঘিরে উৎসুক জনতার ঢল নামে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করেছে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খিয়ারজুম্মা  কবরস্থ।ওনা টাকার দাবিতে এক মৃত নারীর লাশ কবর খুঁড়ে উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়েছে। উপজেলার খিয়ারজুম্মা কবরস্থানে। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে গোটা উপজেলায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আজ সোমবার (১২ জুন) বিকেলে বিষয়টি নিউজ পোস্ট বিডিকে নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান।

পুলিশ, নিহত নারীর পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের জুম্মাপাড়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুল গফুর অসুস্থ থাকায় স্ত্রী শাহেদা বেগম (৫১) দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। তিনি সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক ছিলেন। শাহেদা বেগম ঈদের দুই দিন আগে স্ট্রোক করেন। গত বুধবার তিনি মারা গেলে খিয়ারজুম্মা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। শাহেদার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবে এমন দাবি নিয়ে সোমবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় তার বাড়িতে যান একই গ্রামের জোনায়েদ হোসেনের স্ত্রী রাসেনা বেগম। শাহেদার ছেলে মেয়েরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় শাহেদার কবর খুঁড়তে যান রাসেনা ও তার স্বামী জোনায়েদ হোসেন।

তাদের কবর খোঁড়া দেখতে পান একই এলাকার আব্দুল কাইয়ুম ও রেহেনা বেগম। তারা চিৎকার দিলে রাসেনা বেগম ও তার স্বামী পালিয়ে যান। পরে গ্রামের শত শত লোক কবরস্থানে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ বেলা দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে যান এবং রাসেনাকে আটক করেন থানায় নিয়ে আসেন।

মৃত শাহেদার মেয়ে সাবিনা বেগম অভিযোগ করেন, রাসেনা তার মায়ের কাছে টাকা পাবে এমন দাবি নিয়ে সকালে আসেন। কখনও ৩০ হাজার, কখনও এক লাখ ২০ হাজার টাকা পান বলে দাবি করেন। আমাদের থাকার জায়গা ছাড়া কোনো সহায় সম্বল নেই। রাসেনা যে টাকা দাবি করছে তা দেওয়ার সামর্থ্য আমদের নেই। মা কখনো তার কাছে রাসেনা টাকা পাবে এমনটি আমাদের বলেনি। তাই রাসেনাকে বলি টাকা যদি পান তাহলে মাফ করে দিয়েন। কিন্তু তিনি নারাজ হওয়ায় রাগ করে বলি, যার কাছে টাকা পান তার কাছে নেন। এরপর রাসেনা ও তার স্বামী মায়ের কবর খুঁড়তে যান।
সাবিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, টাকা পাবে কোনো প্রমাণ নেই। অথচ তারা আমার মায়ের কবরস্থানে লাশ বের করার জন্য কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়েছে। এলাকার শত শত মানুষ কবরস্থানে গিয়ে দেখেছে। আমি সঠিক বিচার চাই।

থানা হাজতে আটক রাসেনা বেগম বলেন, ৬ মাস আগে শাহেদার ছেলে সহিদার রহমানের জামিন করার সময় এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছে শাহেদা। আমি ৫০ হাজার টাকা গরু বিক্রি করে ও ৭০ হাজার টাকা ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়ে দিয়েছি। টাকা না দিয়ে এখন আমার নামে বদনাম ছড়াচ্ছে।

তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান বলেন, লোক মাধ্যমে ঘটনাটি জানার পর সরেজমিনে গিয়ে কবরের মাটি সরানো দেখেছি। সেখানে হাজার উৎসুক লোকজন জড়ো হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে রাসেনাকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।