পাচার অর্থ ফেরাতে লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দেবে সরকার

প্রকাশিত: ৩:১৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৪, ২০২৪

সেলিনা আক্তার:

পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেসরকারি খাতের লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, পাচার করা সম্পদ ফিরিয়ে আনাসহ অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে আর্থিক এবং কারিগরি সহযোগিতা দিতে সম্মত হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সভার দ্বিতীয় দিন সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বার্ষিক সভার বাইরে সাইডলাইনে উন্নয়ন সহযোগীদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল বৈঠক করছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এমডি এবং বিশ্বব্যাংক, আইটিএফসির প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা হবে।

তিনি আরও বলেন, এসব আলোচনার মূল কথা হচ্ছে, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর্থিক সাহায্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন। যেমন– পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের লিগ্যাল ফার্ম নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাত সংস্কার, এনবিআরের সংস্কার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে অত্যন্ত সন্তোষজনক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।
আইএমএফের কাছে বাড়তি তিন বিলিয়ন ডলারসহ আর কী ধরনের সহায়তা চাওয়া হয়েছে– এমন প্রশ্নে সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সংস্থাটির বোর্ডের অনুমোদনের বিষয় থাকায় সংগত কারণে কী পরিমাণ অর্থ চাওয়া হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক উন্নয়ন। উন্নয়নের সুফল যেন সাধারণ মানুষ পায়। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা জানান, বাজেট সহায়তার পাশাপাশি প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। ইতিবাচক দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ ঋণ পরেশোধে এখনও ব্যর্থ হয়নি। কিছু বকেয়া হলেও গত দুই মাসে অধিকাংশ বাকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে। এ জন্য দাতারা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

মঙ্গলবার আইএমএফ প্রকাশিত বিশ্ব অর্থনীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সাড়ে ৪ শতাংশ হবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিম্নগতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় সরকার। বরং ধাক্কা সামলে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আইএমএফের এমডি ক্রিস্টালিনা গিওরগিভা সামষ্টিক অর্থনীতি এবং মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনের প্রশংসা করেছেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কোনো কোনো সময় রাজনৈতিক সমস্যা দেখা দিলেও নব্বই-পরবর্তী সব সরকারই এ কৃতিত্বের দাবিদার।

ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ ইস্যুতে ঢাকা থেকে শুরু করে ওয়াশিংটনে অন্তত ১০ বার বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ সব উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। রোডম্যাপ মোটামুটিভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যাংকগুলোর সম্পদ মূল্যায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে কোন ব্যাংকের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে এবং কীভাবে তা উদ্ধার করতে হবে, তা নির্ধারণ করা হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার রয়েছে। ব্যাংক একীভূত করা হবে কিনা, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে আগামী মাস থেকেই মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হবে।

গভর্নর আরও বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে সবাই সহায়তা দিচ্ছে। তবে এটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের কয়েকটি লিগ্যাল ফার্মের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে– এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়েও বিশ্বব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। এসব বিষয়ে আগামী ২৬ অক্টোবর বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হবে।

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, প্রত্যেক বৈঠকে দাতারা জানতে চাচ্ছে, বাংলাদেশের কী প্রয়োজন। তারা বাংলাদেশের নেওয়ার সক্ষমতার চেয়েও বেশি অর্থায়ন করতে আগ্রহী।