পাটগ্রামে বুড়িমারী এক্সপ্রেসের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের পাটগ্রামে আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন সরাসরি বুড়িমারী থেকে চলাচলের দাবিতে নবম দিনের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। এর আগে গতরাতে প্রশাসনের আশ্বাসে হাতীবান্ধায় আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নিলেও, পাটগ্রামের আন্দোলনকারীরা বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন।ফলে এই উপজেলায় টানা নবম দিনের মতো আন্দোলন চলছে। এদিকে সকালে লালমনিরহাট থেকে যাত্রী নিয়ে একটি লোকাল ট্রেন হাতীবান্ধায় গেছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল থেকে পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্নস্থানে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের স্পষ্ট দাবি, বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন বুড়িমারী থেকে সরাসরি চলাচল শুরু না করা পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন না।
আন্দোলনকারীরা জোর দিয়ে জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার মানুষের সঙ্গে তাদের এই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা তাদের উপজেলার আন্দোলন প্রত্যাহার করেছে, সেটি তাদের বিষয়। কিন্তু পাটগ্রামবাসী গত ৯ দিন ধরে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং নীলফামারী বিভাগ যতদিন তাদের প্রাণের দাবি- বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন না পাচ্ছে, ততদিন এই আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনকারীরা আরও জানান, তারা সারারাত সড়কেই অবস্থান করে রাত্রিযাপন করেছেন এবং সেখানেই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করেছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সড়ক ছেড়ে যাবেন না বলে জানিয়েছেনগতকাল সোমবার রাতে জেলা প্রশাসন ও রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাতীবান্ধা উপজেলার আন্দোলনকারীদের বৈঠক হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে হাতীবান্ধার আন্দোলনকারীরা রেলপথ ও সড়ক পথের অবরোধ তুলে নেন। তবে পাটগ্রামের আন্দোলনকারীরা তাদের অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন। এর ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আসা সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন সড়কে আটকা পড়েছে এবং ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পরীক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এদিকে, আজ সকাল ৯টার দিকে লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে একটি কমিউনিটির লোকাল ট্রেন যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেলেও, বুড়িমারী পর্যন্ত না গিয়ে হাতীবান্ধা হয়ে লালমনিরহাটে ফিরে আসে। ৪ জোড়া ট্রেন পাটগ্রামের অবরোধ চলাকালীন শুধুমাত্র হাতীবান্ধা থেকে চলবে বলে জানিয়েছে রেল বিভাগ।
গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে হাতীবান্ধা ডাকবাংলোয় জেলা প্রশাসন ও রেল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর নেতাদের বৈঠক শুরু হয়। এর আগে, রাত সাড়ে ৮টায় রেল বিভাগের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা প্রথম দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। টানা আড়াই ঘণ্টার আলোচনা শেষে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানান।
বৈঠকে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাদাত হোসেন এবং লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী নাজিম কায়সার ‘আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এর আগে আন্দোলনকারীদের পক্ষে সমন্বয়ক সাহেদুজ্জামান কোয়েল, ফারুক হোসেন নিশাদ, শামসুল আলম বুলেট ও ফিরোজ হোসেন এবং উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মো. রফিকুল ইসলাম বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান সাজু বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ায় আপাতত হাতীবান্ধায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পাটগ্রামে অবরোধ চলবে কিনা, সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বিবেচনা করা হচ্ছে এবং দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর লালমনিরহাটের কমান্ড্যান্ট মোশারফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সরাসরি চলাচল নিশ্চিত করার দাবিতে ৯ দিন রেলপথ ও ৩৬ ঘণ্টা ধরে আন্দোলনকারীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছিলেন, যার ফলে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। হাতীবান্ধায় অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও, পাটগ্রামের অবরোধ কবে নাগাদ প্রত্যাহার হবে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।