পানি সংকট নেই, তারপরও ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শোধনাগার!

প্রকাশিত: ৪:২২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি সিলেট

সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার নাগরিকদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছে একটি শোধনাগার। বছরখানেক আগে শেষ হয়েছে এর কাজ। এরইমধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শোধনাগারটি বুঝিয়ে দিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু গ্রাহকের অভাবে এখনো অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে আট কোটি ৯০ লাখ টাকার এ পানি শোধনাগার। নিয়মিত ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। এমন পরিস্থিতিতে পানি শোধনাগার রক্ষায় বিপাকে পড়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

তবে পৌরসভার নাগরিকদের দাবি, প্রতিটি বাড়িতে টিউবওয়েল রয়েছে। কোথাও পানির অভাব নেই। অযথা অতিরিক্ত খরচে আগ্রহী নয় পৌরবাসী। যে কারণে সংযোগ নিতে চাচ্ছেন না তারা।

অবশ্য পৌরশহরের ভাড়া বাসায় বসবাসকারীদের মধ্যে ২০০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে। শহরের ২২ কিলোমিটার এলাকায় পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি এলাকায় পাইপলাইন বসানোর কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র ফারুকুল হক।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজারসহ দেশের ৪০টি পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় বিয়ানীবাজার পৌরসভায় গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৮ সালের জুনে ফতেহপুর এলাকার লোলাখালের কাছে পানি শোধনাগার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে গতবছর প্রকল্পের কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যানটি বুঝিয়ে দিলেও প্রায় ৪৫ হাজার পৌরবাসীর কোনো কাজেই আসছে না এটি। তবে এক্ষেত্রে পৌরবাসীর অনাগ্রহকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পৌরসভা সূত্র জানায়, পানি শোধনাগারের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি অত্যাধুনিকভাবে নির্মিত। এ প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পানি পরিশোধন করা হবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবেই পানিতে থাকা আয়রন ও আর্সেনিকের পরিমাণ জানা যাবে। সেইসঙ্গে জানা যাবে কত লিটার পানি সরবরাহ হয়েছে আর কত লিটার জমা আছে। এখানে মূলত তিনটি পাম্পের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পর পরিশোধন করা হবে। এরপর সেখান থেকে পৌঁছে দেওয়া হবে গ্রাহকের কাছে।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার নকশাকার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পৌর এলাকায় ২০০ কিলোমিটার মূল রাস্তা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে পৌরশহর ও শহরতলী এলাকার ২২ কিলোমিটার এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো পৌরসভায় পাইপলাইন স্থাপন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটি আমরা ভর্তুকি দিয়ে চালু রেখেছি। কারণ পাইপলাইনে পানি ব্যবহার করলে গ্রাহকদের বিল দিতে হয়। তাই সংযোগ নিতে অনাগ্রহী এখানকার গ্রাহকরা। এ পর্যন্ত মাত্র ২০০টি সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’

পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকবর হোসেন  বলেন, ‘পৌর এলাকার প্রত্যেকটি বাড়িতে টিউবওয়েল রয়েছে। কেউ পানির অভাববোধ করছেন না। এমনকি আমার বাড়িতেও গভীর নলকূপ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় ২০ ফুট নিচে গেলে পানি পাওয়া যায়। আমি ৩০ ফুট নিচ পর্যন্ত নলকূপ স্থাপন করেছি। যাতে অদূর ভবিষ্যতে পানির সংকট না হয়। একইভাবে প্রত্যেকটি বাড়িতেই এভাবে পানির ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে পানি শোধনাগার থেকে কেউই পানির সংযোগ নিতে চাচ্ছেন না।’

জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র ফারুকুল হক বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে শোধনাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পৌরবাসী সংযোগ নিতে আগ্রহী নয়।’

তিনি বলেন, ‘এখানকার বেশিরভাগ বাড়িতে গভীর নলকূপ রয়েছে। যে কারণে পানির সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া সংযোগ নিলে অতিরিক্ত খরচও পড়বে তাদের ওপর। যে কারণে পানির সংযোগ নিতে আগ্রহ কম। তবে পানির পাম্প এবং যন্ত্রাংশ যাতে বিকল না হয় সেজন্য এটি চালু রাখা হয়েছে।’মেয়র বলেন, নতুন করে পাইপলাইন স্থাপনের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটা অনুমোদন হলে আরও কিছু সংযোগ দিতে পারবো।