‘পুঁজিবাজারে যত সুবিধাই দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে বেনিফিট দেখা যায়নি’

প্রকাশিত: ২:৫১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

পুঁজিবাজারে আজ পর্যন্ত যত সুবিধাই দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে তার বেনিফিট পাওয়া যায়নি। বরং গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে তারা ৭ থেকে ১৫ শতাংশ পুঁজি হারিয়েছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে প্রাক বাজেট আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান এমন মন্তব্য করেন।

বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ও মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ। সংগঠনগুলো পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেয়

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, সারাজীবন কর অব্যাহতি দিলাম, রেজাল্ট তো আসে না। আগেই কেন অব্যাহতির কথা আসে। সবার আগে কেন ট্যাক্স হলিডে লাগবে? কর অব্যাহতির সংস্কৃতিতে আর থাকতে চাই না। অব্যাহতি দিতে দিতে নিন্ম কর জিডিপি অনুপাত থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের বদনাম হয়ে গেছে যে, রাজস্ব যা আদায় করি, তার সমপরিমাণ অব্যাহতি দেই।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে যত সুবিধা দেওয়া হয়েছে, মার্কেটে তার বেনিফিট পাওয়া যায়নি। গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে যারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে তাদের ৭ থেকে ১৫ শতাংশ ক্যাপিটাল হারিয়েছে। আমরা অব্যাহতি সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছি। আমরা পণ করেছি অব্যাহতি আর দেব না। অব্যাহতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি।স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ লেনদেন থেকে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তি কর্তৃক মূলধনী মুনাফার উপর সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি চায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি।

এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যদের কাছ থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার হ্রাস, উৎসে লভ্যাংশ আয়ের উপর কর হ্রাস এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসাবে বিবেচনা করা, তালিকাভুক্ত বন্ড থেকে অর্জিত আয় বা সুদের উপর কর অব্যাহতির প্রস্তাব করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় লভ্যাংশ করের উপর দ্বৈত করের বিধান প্রত্যাহার করে লভ্যাংশ আয়কে করমুক্ত করা, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রদেয় কর হারের ব্যবধান কোন ধরনের শর্ত ছাড়া ১০ শতাংশ করা, নির্ধারিত বার্ষিক মোট নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ এ সীমা ৩৬ লাখ টাকার স্থলে মোট ব্যবসায়িক টার্নওভারের ১০ শতাংশ করা, এসএমই ও এটিবি এ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে তালিকাভুক্তির প্রথম তিন বছরের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া, করমুক্ত আয়ের সীমা ৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অন্যদিকে বিমা খাত প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিমা খাতের সুনামের অভাব আছে। এ খাতে গভর্নেন্সের (সুশাসন) জি-ও নাই। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অনেক বছর আগে আমার কাছে একজন সাংবাদিক এলেন। তিনি জানালেন একজন বিমা কোম্পানির কর্মকর্তা বাসায় থাকতে পারছেন না। গ্রাহকের পলিসি ম্যাচুরড হওয়ার পর কোম্পানি টাকা দিচ্ছে না। এই হলো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অবস্থান। এটাই সত্য।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঈদ আহমেদ সংগঠনের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সংগঠনটি কর্পোরেট কর হ্রাস করা, স্বাস্থ্যবিমার উপর ট্যাক্স কর্তন রহিত করা, অনলাইনভিত্তিক বিমা প্রিমিয়ামের উপর ভ্যাট ও করপোরেট কর রহিত করার প্রস্তাব জানিয়েছে।

বিমা কোম্পানিগুলো উন্নত দেশের মতো হেলথ কার্ডের প্রচলন করতে না পারায় সমালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, হেলথ ইন্স্যুরেন্স ভালোভাবে দিতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে।

এছাড়া ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ মূলধনী আয়ের উপর করহার ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) ভ্যাট সফটওয়্যারের বাস্তবায়ন, ঋণ অ্যাকাউন্ট ও ক্রেডিট কার্ড অ্যাকাউন্টের উপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার, মূসক নিরীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্তির সময় সুনির্দিষ্ট করা।

তাদের অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অনিবাসীকে ঋণের সুদ পরিশোধের সময় উৎসে আয়কর কর্তনের ক্ষেত্রে আগের মতো অব্যাহতির মেয়াদ বর্ধিত করা, ব্যাংকের কর্পোরেট আয়করের হার হ্রাস করা এবং সব তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য অভিন্ন কর্পোরেট করের হার প্রণয়ন করা, ব্যাংকে মেয়াদি আমানতের হিসাব খোলা ও বহাল রাখা, ঋণ বিতরণ ও ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করার ক্ষেত্রে পিএসআর দাখিলের বাধ্যবাধকতার বিধান প্রত্যাহার করে আগের মতো ই-টিএন দাখিলের বিধান পুনর্বহাল করা, দ্বৈত কর (ডাবল ট্যাক্সেশন) হলে সরকার থেকে সরকার পর্যায়ের চুক্তি তাই ব্যাংকগুলোকে দ্বৈত কর চুক্তিতে বর্ণিত কর হার প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া ইত্যাদি।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্পোরেট কর হার ২৫ শতাংশ করা, স্টক লভ্যাংশের উপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করা, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাটের হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করে প্রাক-বাজেট আলোচনায়।