পেকুয়া সাবমেরিন ঘাঁটি হতে পারে ভারতের মাথাব্যথার কারণ

প্রকাশিত: ১২:৪৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২২, ২০২৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ 

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসাবে চীন ও ভারতের একটি অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে বলে এদেশের সচেতন সব মানুষের ধারনা। সম্প্রতি চীনের একটি গুপ্তচর জাহাজকে তার নৌ বন্দরে নোঙ্গর করার অনুমতি দেয়নি শ্রীলঙ্কা। এতে ভারত অস্থায়ী প্রতিকার পেলেও নয়াদিল্লির জন্য আরও বড় উদ্বেগের কারণ হতে চলেছে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ।

গত বছর চীনের কারিগরি সহায়তায় নিজস্ব অর্থায়নে প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ। কক্সবাজারে নৌবাহিনীর সাবমেরিন ঘাঁটির ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ কমিশনিংয়ের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে যাত্রা করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নে কুতুবদিয়া চ্যানেলের পাশ ঘেঁষে স্থাপন করা হয়েছে এ নৌঘাঁটি।

সর্বশেষ স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে কক্সবাজারের পেকুয়ায় চীন কারিগরি সহায়তায় নির্মিত সাবমেরিন ঘাঁটির উপর একটি শুকনো ডক দেখা গেছে। এই চিত্র শুধুমাত্র ভারতে নয়, সমগ্র ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল জুড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।অনেকে ধারনা করছে চীন, অদূর ভবিষ্যতে, পারমাণবিক সাবমেরিন ঘাঁটি সহ ভারতের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নৌ ঘাঁটির মুখোমুখি বঙ্গোপসাগরে তার সাবমেরিনগুলির জন্য একটি ঘাঁটি চাইছে।

ড্যামিয়েন সাইমন একজন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ ‘ডেট্রেস্টফা’ আইডি দিয়ে গত মাসে শুকনো ডকের (জলবাহী জাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবহৃত) একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছেন।সাইমন তার পোস্টে লিখেছেন, চীনের এই বর্ধিত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বেইজিংকে এই অঞ্চলে তার উপস্থিতি এবং প্রভাবকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করছে।বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিনিয়োগ। বস্তুত চীন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি। পাকিস্তানের পর চীনের তার দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা সামগ্রী রপ্তানি করে বাংলাদেশে।

সামরিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতাই বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্কের ভিত্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য হারে অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে এটি ভারতের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশের ওপর চীনের এমন দখলদারি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে প্রভাবিত করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

১৯৭২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের সদস্যপদ নিয়ে যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভোট হয়, তখন ১৫টি দেশের মধ্যে একমাত্র চীন তাদের ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সেই চীনই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী।২০০২ সালে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দেশটির সামরিক যন্ত্রাংশের বেশির ভাগই চীনা। এত দিন মাথা না ঘামালেও ভারত সম্প্রতি আশপাশে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। ঠিক যে সময় দক্ষিণ চীন সাগরের ব্যাপারে চীন দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে উঠেছে।

প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে গভীরতর নৌ-সহযোগিতা ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনাকারীদের জন্য মাথাব্যথা নয়, মাইগ্রেন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।পররাষ্ট্রবিদরা ধারণা করছেন পেকুয়ায় নবনির্মিত সাবমেরিন ঘাঁটিতে চীনা সাবমেরিন এবং তাদের অপারেটরদের দীর্ঘমেয়াদী নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতির বিষয়টি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।