পোশাক শ্রমিকদের ‘রক্তচোষা বায়ার-ব্র্যান্ড’

প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪

সেলিনা আক্তার 

পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। একটি পোশাক ৫ থেকে ৬ ডলারে কেনার পর বায়ার-ব্র্যান্ড সেটি ১৫ থেকে ২০ ডলারে বিক্রি করে। এখানে অনৈতিক দাম দেওয়া হয় উৎপাদকদের। বায়ার-ব্র্যান্ড যেনো ‘দেশের তৈরি পোশাক শিল্পের রক্তচোষা।’

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীতে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ বা আইবিএফবি আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমই’এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

আইবিএফবি কনফারেন্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের ডেপুটি হেড অব মিশন বার্ন্ড স্প্যানিয়ার, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন, আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ন রশিদ, উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, সহ-সভাপতি এম এস সিদ্দিকী প্রমুখ।

এসময় মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিশ্বের সর্বোচ্চ স্ট্যান্ডার্ড কারখানা বাংলাদেশে। সর্বোচ্চ মানের দিক থেকে প্রথম, টেকসইয়ের দিক থেকেও সেরা। বিশ্বের সবুজ কারখানার বেশি অর্ধেকেই এখন আমাদের দেশে অবস্থিত। এখন আমরা যে অবস্থায় আছি অনেক দেশই আমাদের ধারের কাছেও নেই।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় আসতে বায়ারসহ সবাই ক্রেতা দেশের সহযোগিতা ছিল। কিন্তু আমাদের ভালো মানের পণ্য উৎপাদন হলেও আমরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। দামের ক্ষেত্রে আমাদের অনৈতিকভাবে দাম দেওয়া হয়। আমাদের এখানে উৎপাদন বাড়লেও ৬ ডলারের পোশাক ২০ ডলারে বিক্রি করে ব্র্যান্ড-বায়ার। তারা যেনো পোশাক শিল্প শ্রমিকের রক্ত চোষা।

ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, সবাই এখানে ব্যবসা করতে এসেছেন। কে কি লাভ করবেন, কত দামে কিনবেন সেটা সমন্বয়ের ব্যাপার। এটা ব্যবসা, এটা চ্যারিটি (অনুদান) না।তিনি বলেন, আপনারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগী করে দাম কমায়ে দেন। এখানে বায়ার কী করবে। এখানে লাভ করবেন সবাই। কে কতটা লাভ করবে, কে কত দামে বিক্রি করবে সেটাতো নেগোসিয়েশনের ব্যাপার।

রাষ্ট্রদূতের জবাবে হাতেম বলেন, নিজেদের মধ্যে অনেক সময় কম দামে পণ্য বিক্রির প্রবণতা থাকে। সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তবে যখন আমি শ্রমিকের বেতন দিতে পারি না, বিভিন্ন বিল বকেয়া পড়ে যায় তখন কম দামে পণ্য বিক্রি ছাড়া উপায়ও থাকে না। এখানে বায়ারেরও দায়িত্ব আছে, চাইলেই তারা কম দাম দিতে পারে না। তাদের উৎপাদন খরচের সঙ্গে পণ্যের দামে সমন্বয় করা উচিৎ।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশ সেলর মার্কেট, বায়ার মার্কেট না। বিশ্বে যখনই কোনো সমস্যা দেখা দেয় তখনই বায়রা পণ্যের দাম কমিয়ে দেই। বৈশ্বিক মহামারিকালে দাম কমানো হয়। এরপর সবকিছু ঠিক ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দাম কমানো হলো। জ্বালানির দাম কমানোর প্রভাবেও দাম কমানো হয়।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক সমস্যার প্রভাব ফেলা হয় তৈরি পোশাকের ওপরে। এতে আমাদের পোশাক শিল্পে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যায়। সমস্যা-সম্ভাবনা থাকবে, মূল্যের সমন্বয় থাকা জরুরি। তিনি আবারও ন্যায্য মূল্যকে প্রধান্য দেওয়ার দাবি জানান বায়ার-ব্র্যান্ডের প্রতি।