অনুমোদন দেয়া প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ধীর গতি নিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রতিক্রিয়া দেখান তিনি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
বৈঠকে খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্থকরণসহ ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক।
এগুলো বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ১৩৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে সংশোধিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে শুধু বর্ধিত ব্যয়ের হিসাবটাই ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ হাজার ২৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা (ঋণ ও অনুদান) থেকে ১০৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
বৈঠকে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ভার্চুয়াল ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
মন্ত্রী বলেন- বাস্তবায়নের গতি নেই, আবারও বাড়ছে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে দুটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন- সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে হবে। প্রকল্পের মূল কাজ বাস্তবায়নে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনকে রিভিউ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রকল্প দুটি হচ্ছে, ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্থকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থকরণ প্রকল্প।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ক্ষোভ ও বিরক্তির পাশাপাশি এখন থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ কিংবা রাবার ড্যাম নির্মাণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন- প্রকৃতির সঙ্গে খেলতে গেলে সাবধান হতে হবে। কেননা একদিকে ভাঙন রোধ করা হলে দেখা যাবে অন্যদিকে ভেঙে সবকিছুই শেষ করে দিচ্ছে। তাই এখন থেকে বাঁধ হোক বা রাবারড্যাম হোক সুদুরপ্রসারী স্টাডি করতে হবে।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, এই সংশোধনীর মধ্যদিয়ে ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্থকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে ১০৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে ৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ ছাড়া দুই বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে যাচ্ছে সাড়ে ৭ বছর। শুরু থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৮৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। এটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিতে গিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি রিভিউ করতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনকে।
এ ছাড়া ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ হতে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্থকরণ’ প্রকল্পটিতে ব্যয় বেড়েছে ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। সেই সঙ্গে মেয়াদও বেড়েছে আড়াই বছর। এটির সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ।
এ ছাড়া প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। এরই মধ্যে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এতেও কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় এখন নতুন করে আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, এ প্রকল্পে মূল কাজের বাইরে বাংলো বা টুরিস্টদের জন্য হোটেল করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- মূল কাজটাই করুন। অর্থাৎ রাস্তা প্রশস্থকরণ ও ঘাটলা নির্মাণ। চায়ের দোকান যা প্রয়োজন হবে তা বেসরকারিভাবে ব্যবসায়ীরাই করবেন।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে- কুমিল্লা জেলার তিতাস ও হামনা উপজেলায় তিতাস নদীর (লোয়ার ইতিহাস) পুনঃখনন। গাইবান্ধা জেলার সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোঘাট ও খানাবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা যমুনা নদীর ডানতীরের ভাঙন হতে রক্ষা। চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট-ব্রিজিং (অতিরিক্ত অর্থায়ন) (বাপাউবো অংশ) এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প।