ফয়সালকে কুপিয়ে হত্যার পর পার্টি করে গালকাটা রাব্বির গ্যাং
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মিরপুরে গালকাটা রাব্বি গ্রুপের সঙ্গে মাদক কেনা-বেচা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ১৫ মার্চ পেপার সানী গ্রুপের মারামারির ঘটনা ঘটে। গালকাটা রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেওয়ার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা থেকেই ১৬ মার্চ দিনভর রেকি করে ফয়সাল ও তার বন্ধু রানাকে প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।
ওই রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফয়সাল মারা যায়। এ সময় পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় গ্রুপের অন্য এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পার্টির ডেকে উদযাপন করে রাব্বি গ্রুপ।রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কিশোর গ্যাং লিডার পলাতক মূল আসামি ও হত্যাকারী গালকাটা রাব্বি ও টান আকাশসহ জড়িত ৫ জনকে নরসিংদী ও গাজীপুর জেলা হতে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
শনিবার বেলা ১১টার দিকে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্লবী এলাকায় কতিপয় দুর্বৃত্ত প্রকাশ্যে কুপিয়ে এক যুবককে হত্যা করে। পরে পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বাবা। র্যাব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
২২ মার্চ রাতে র্যাব-৪ ও র্যাব-১১ গাজীপুর এবং নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের হোতা মো. আকাশ ওরফে টান আকাশ, ফজলে রাব্বি ওরফে হিটার রাব্বি ওরফে গালকাটা রাব্বি (২০), মো. ইমরান (২৫), রাসেল কাজী (২৪) এবং নয়নকে (২৫) গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার রাব্বি ও আকাশের দেওয়া তথ্যমতে, ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি বাগান হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছুরি ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মূলত তারা ও ভুক্তভোগী ফয়সাল রাজধানীর মিরপুর এলাকার কিশোর গ্যাং পেপার সানী গ্রুপের সদস্য। গ্রেপ্তার গালকাটা রাব্বি পেপার সানী গ্রুপের হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো বলে জানা যায়।
বিগত ৪/৫ মাস আগে মাদক কেনাবেচা সংক্রান্ত ভাগাভাগি, সিনিয়র-জুনিয়র, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও অন্তঃকোন্দলের কারণে গ্রেপ্তাররা পেপার সানী গ্রুপ থেকে বের হয়ে গালকাটা রাব্বির নেতৃত্বে ‘গালকাটা রাব্বি গ্রুপ’ তৈরি করে। এরপর থেকেই দুই গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই মাদক কেনাবেচাসহ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারি হতো বলে জানা যায়।জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, প্রায় এক মাস আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বিকে মুরাপাড়া ক্যাম্পে নিয়ে তার পায়ের রগ কেটে দেওয়ার চেষ্টা করলে ক্যাম্পের মহিলারা তাকে উদ্ধার করে।
১৫ মার্চ গালকাটা রাব্বি গ্রুপের সঙ্গে মাদক কেনাবেচা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পেপার সানী গ্রুপের মারামারির ঘটনা ঘটে। গালকাটা রাব্বি গ্রুপ ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এছাড়াও ঘটনার দিন পেপার সানী গ্রুপের সদস্যরা গালকাটা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্যের বোনকে ইভটিজিং করে।
বিষয়টি গালকাটা রাব্বি জানতে পারলে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের উচিত শিক্ষার দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়। এসময় গ্রেপ্তাররা জানতে পারে তারা একটি ইফতার পার্টিতে গেছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, গালকাটা রাব্বি গ্রুপের একজন সদস্য রিকশাযোগে ঘটনার ১৫/২০ মিনিট আগে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় ধারালো অস্ত্র রাব্বি-আকাশসহ অন্যান্য সদস্যদের হাতে দেয়।ভুক্তভোগী ফয়সাল ও তার বন্ধু রানা ইফতার পার্টি শেষে বাসায় যেতে থাকলে গ্রেপ্তাররা দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের প্রকাশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে।
পরে তারা পেপার সানী গ্রুপের সদস্যকে উচিত শিক্ষা দিতে পারায় গ্রুপের অন্য এক সদস্যের বাসার ছাদে গিয়ে পার্টি করার মাধ্যমে উদযাপন করে।রক্তাক্ত জখম অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করে এবং রানাকে গুরুতর আহত অবস্থায় একই হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে গ্রেপ্তাররা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে প্রথমে নেত্রকোনায় আত্মগোপন করে। সেখানে দুইদিন অবস্থান করে। পরে মুন্সিগঞ্জ ও গাজীপুর এলাকায় আত্মগোপনে থাকে এবং আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করে।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার রাব্বির বিরুদ্ধে ডাকাতি, মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা রয়েছে এবং আগেও একাধিক বার কারাভোগ করেছে। আকাশের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা রয়েছে, সেও একাধিকবার কারাভোগ করেছে।এছাড়া, গ্রেপ্তার রাসেল, ইমরান ও নয়ন কিশোর গ্যাং ‘গালকাটা রাব্বি’ গ্রুপের সদস্য। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মারামারি ও মাদক সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাব্বীর গ্রুপে ১৪-১৫ জন সদস্য রয়েছে। যাদের অধিকাংশই আগে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য ছিল। পরে তারা সেই গ্রুপ থেকে বের হয়ে নতুন গ্রুপে যোগ দেয়। এখন পর্যন্ত তাদের ইন্ধনদাতা বা মদতদাতার তথ্য পাওয়া যায়নি। পেপার সানী গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধেও আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।