ফেরিতে পার হচ্ছে চোরাই কাঠ, যাচ্ছে ইট ভাটায়

প্রকাশিত: ৫:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৫

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

 

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর ফেরিতে পাচার হচ্ছে চোরাই কাঠ। রাতের অন্ধকারে চাঁদের গাড়ি বোঝাইয়ে ফেরিতে নদী পার হয়ে এসব কাঠ যাচ্ছে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে ইটের ভাটায়। এক শ্রেণীর চোরাই কাঠ ব্যবসায়ী সরকারী বনাঞ্চল থেকে অবৈধ উপায়ে কাঠ কেটে ইটের ভাটায় সরবরাহ করে আসছে।

জানা যায়, চাহিদার ভিত্তিতে চলতি মৌসুমের শুরুতেই ইট ভাটা গুলোতে জ্বালানী কাঠ সরবরাহ ব্যবসায় তৎপর হয়ে উঠেছে এসব ব্যবসায়ী। চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলী নদীর ফেরী ছাড়াও গোডাউন এলাকায় কর্ণফুলী নদীর সেতুতে পার হয়ে ইটের ভাটায় যাচ্ছে চোরাই জ্বালানি কাঠ। গত ডিসেম্বর মাসের শুরুতে এখানে চালু হয়েছে চোরাই জ্বালানি কাঠ পাচার কার্যক্রম। উভয় স্থানে প্রতিদিন শত শত চাঁদের গাড়ীতে জ্বালানি কাঠ যাচ্ছে ইটের ভাটায়। জ্বালানি কাঠের অবৈধ ব্যবসায় ব্যাপক হারে বনাঞ্চল উজাড়ে মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। পরিবেশ এবং বনাঞ্চল রক্ষায় কোথাও কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। রাইখালী বান্দরবান সড়কে রাইখালীতে কর্ণফুলী ফেরী ঘাটে চোরাই জ্বালানি কাঠের পাচার এখন রমরমা হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের রাইখালী ও রাজস্থলী রেঞ্জের বাগান উজাড় করে চোরাই পথে এসব কাঠ আসছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধ্যার পর থেকে ফেরিঘাট চোরাই কাঠের ব্যবসার কর্মযজ্ঞে চঞ্চল হয়ে উঠে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগের রাইখালী এবং বাঙ্গাল হালিয়া চেক-ষ্টেশন অতিক্রম করে সন্ধ্যায় চোরাই কাঠের গাড়ি ফেরি ঘাটে আসে। ইজারাদারের সহায়তায় রাতভর কাঠের গাড়ি ফেরীতে নদী পারাপার চলে।

ফেরী ইজারাদার প্রতিনিধি মোহাম্মদ হাছান জানান, ফেরী পারাপারে যানবাহনে পণ্যের বৈধতা যাচাইয়ের নিয়ম নেই। চন্দ্রঘোটা ফেরী সড়কে উঠে কাঠের গাড়ি চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে মরিয়নগর চৌমুহনী হয়ে ডিসি সড়কে উত্তর রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুর, মগাইছড়ি, গাবতল, ঠান্ডাছড়ি, মোহাম্মদ পুরের বিভিন্ন স্থানে ইটের ভাটায় যায়। রাইখালী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক জানান, চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীর একাধিক সিন্ডিকেট কাঠ পাচারে জড়িত। কাঠ পাচারে তাদের সাথে বনকর্মীদের যোগসাজশ রয়েছে।

পাল্পউড বাগান বিভাগের বাঙ্গাল হালিয়া ও রাইখালি বনরেঞ্জের দায়িত্বরত ফরেস্টার জাহেদুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ ফরেষ্টের নয় স্থানীয় কতিপয় ব্যবসায়ী গ্রামাঞ্চলের বাড়ি ভিঠার গাছ ক্রয় করে জ্বালানী কাঠের ব্যবসা করছে। তবে অবৈধ উপায়ে পাচারের এসবের কারণে প্রতিরোধের চেষ্টা চলে। ইট পোড়ানোর মৌসুমে জ্বালানী ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে একই সময়ে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন এলাকায় জমে উঠেছে চোরাই কাঠের ব্যবসা। ইউনিয়নের মীরেরখিলসহ প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় গড়ে উঠেছে জ্বালানী কাঠের বাজার। সংরক্ষিত সরকারী বনাঞ্চল উজাড় করে এসব বাজারে কাঠের ডিপো গড়ে তোলা হয়েছে। ডিপোর মজুদ থেকে ব্যবসায়ীরা অবৈধ উপায়ে ইটের ভাটায় জ্বালানী কাঠ পাচার করছে। গোডাউনে কর্ণফুলী সেতু পার হয়ে চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়কে রাঙ্গুনিয়া বন রেঞ্জের পোমরা চেক ষ্টেশন ম্যানেজ করে প্রতি রাতে শত শত চাঁদের গাড়ি বোঝাই জ্বালানী কাঠ যায় ইটের ভাটা গুলোতে।

রাঙ্গুনিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা নুরে আলম হাফিজ বলেন, নতুন যোগদান করেছি। চোরাই কাঠ পাচারে সর্বাত্মক প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পোমরা বন চেক ষ্টেশন কর্মকর্তা মাহমুদুল ইসলাম পলাশ জানান, চোরাই কাঠ পাচার ঠেকাতে চেক ষ্টেশনে বনকর্মীরা তৎপরতা রয়েছে।