বইয়ের ভবিষ্যৎ মানুষের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বইয়ের ভবিষ্যৎ আজ মানুষের ভবিষ্যতের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, বই এখন খুব দুর্দিনে আছে। মুনাফাবাদী বিশ্বব্যবস্থা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে, স্বার্থপরে পরিণত করছে। মানুষ বই পড়ায় আগ্রহী না হয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে।

গতকাল শনিবার বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউস চত্বরে দুই যুগ পূর্তিতে ১০ দিনব্যাপী ঐতিহ্য বই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষকে বইয়ের মানবিক বাণী ধারণ করে বেঁচে থাকার এবং সুষম পৃথিবী গড়ার লড়াই করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে লেখা ‘নেতা ও পিতা’ বই প্রকাশের পর পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দুটি গোয়েন্দা সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে দাবি করেন বইটির লেখক শারমিন আহমদ। তিনি বলেন, এক দশক আগে ‘ঐতিহ্য’ থেকে বইটি প্রকাশের পর চট্টগ্রামে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে গিয়ে আমাকে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার জেরার মুখে পড়তে হয়েছিল। আমার সঙ্গে তখন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দীন চৌধুরীও ছিলেন।
তাজউদ্দীনকন্যা বলেন, ‘বইকে যে কত ভয় পেতে পারে, সত্যকে যে কত ভয় পেতে পারে! অনুষ্ঠানের আগেই আমাকে তারা জেরা করলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি যে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থন নিয়ে মুজিবাহিনী করে, তারা যে মুক্তিযোদ্ধাদেরই আক্রমণ করছিল– এই ঘটনাও তো জানতে হবে। আমি সেটা কেন লিখেছি, তারা (গোয়েন্দারা) সেটা জানতে চান।’

প্রকাশনা সংস্থা ঐতিহ্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা তো বইটি তুলে নিতে পারত, তারা সেটি করেনি। তারা শুধু বই প্রকাশ নয়, সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর হয়ে একটি প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে কাজ করে চলেছে।’
২০০০ সালে যাত্রা শুরু করে দুই হাজারের বেশি বই প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। প্রকাশনা সংস্থা চালাতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চক্ষুশূল হওয়ার কথা বলেছেন ঐতিহ্যের প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে ‘ক্রসফায়ার: রাষ্ট্রের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ নামে একটি বই আমরা প্রকাশ করেছিলাম। এর জন্য রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনী থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমরা কত কপি বই ছেপেছি; বইগুলো কোথায়? ওই সময়টাতেই বিডিআর হত্যাকাণ্ড ঘটে, পরে তারা আর যোগাযোগ করেননি। ওই যাত্রায় আমরা নিজেদের সেইফ রাখতে পেরেছিলাম।

অনুষ্ঠানে তরুণ অনুবাদক মাহীন হক বলেন, ঐতিহ্য প্রকাশনা জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। নবীন-প্রবীণের সৃজনশীল অভিযাত্রাকে তারা সাহসিকতার সঙ্গে ধারণ করছে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আগামী ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এ বই উৎসব চলবে প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। উৎসবে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে বই সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠক।