বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামকে সাংহাইয়ের মতো দুটি শহরকে একটি নগরীতে পরিণত করবে
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
বহুল প্রত্যাশিত মাল্টিলেন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্রেসওয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী শনিবার উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর নগরীর কোটি বাসিন্দার স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হতে যাচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এই টানলের মেগা প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী আজ বাসস’কে বলেন, ‘টানেলটি বাংলাদেশকে বিশ্বে একটি নতুন উচ্চতায় উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ এটিই এই অঞ্চলের প্রথম নদীর তলদেশে সুড়ঙ্গপথ।’
তিনি বলেন, টানেলটি চট্টগ্রাম নগরীকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘দুটি শহরকে একটি নগরীতে’ পরিণত করবে এবং এটি দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। শিল্পায়নের অপার সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাবে এবং নগরীর পরিধিকে প্রসারিত করার মাধ্যমে সমগ্র অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটাবে।
প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক কর্মসূচির সময়সূচি অনুযায়ি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন করবেন এবং টানেল পার হওয়ার পর সকাল ১১টায় আনোয়ারা নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন। যদিও টানেলটি ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহনের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশ পানির নিচ দিয়ে সড়ক সুড়ঙ্গের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যা অবশ্যই সমগ্র জাতির জন্য গর্বের, একই সাথে এটি ব্যবসায়ী সমাজকে ব্যাপকভাবে সুবিধা দেবে।
বঙ্গবন্ধু টানেল এই অঞ্চলে শিল্পায়নকে উৎসাহিত করবে, কারণ চট্টগ্রাম-আনোয়ারায় কেইপিজেড এবং হালিশহরে চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং আনোয়ারায় চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (সিইআইজেড) এই টানেলের মাধ্যমে দুটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল অত্যন্ত সুবিধাজনক হবে। পদ্মা সেতুর মতো দেশের অর্থনীতিতে এটিও এইভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
এফবিবিসিআই সভাপতি আরও বলেন, টানেলটি ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে সংযুক্ত করবে। একইসাথে এটি কক্সবাজারের চলমান এবং পরিকল্পিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কেন্দ্রের সুবিধা দেবে, যা ইতিমধ্যেই দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।
তিনি বলেন, টানেল ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা গেলে এবং কর্ণফুলী নদীর তীরে পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান করা গেলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। পাশাপাশি, এটি মিজোরাম এবং মণিপুরসহ ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’-এর সাথে বাংলাদেশের যোগাযোগ বাড়াতে এবং এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটনের প্রসার ঘটাতে পারে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং প্রথম নদীর তলদেশে সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সীলমোহরও অবমুক্ত করবেন।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা এ উপলক্ষে সমাবেশের আয়োজন করছে এবং উৎসব উপলক্ষে সারা জেলায় এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বাসস’কে বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের জন্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারাদেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এবং এর সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও মঞ্চে থাকবেন। সমাবেশস্থলে একটি বড় নৌকা আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান চৌধুরী।
তিনি বলেন, সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানস্থলে স্যানিটেশন ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারীদের নির্বিঘেœ অংশগ্রহণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।
মোতাহেরুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, প্রায় লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের জনসভা এক বিশাল মানবসমুদ্রে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য একটি গর্বের বিষয়।
টানেলটি ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমিয়ে প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করবে।
১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক চীনের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়ন করেছে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুসারে, পুরো রুটের দৈর্ঘ্য হল ৯.৩৯ কিলোমিটার (৫.৮৩ মাইল), সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬ মাইল) ও এর ব্যাস ১০.৮০ মিটার (৩৫.৪ ফুট)।
এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নেটওয়ার্ক উন্নততর হবে। চীনের কোম্পানি চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা টানেলটির বোরিং ফেজও উদ্বোধন করেন।
টানেলটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে সড়ক পথের দূরত্ব কমিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বন্দরনগরীতে প্রবেশ করে চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান্য অংশে যেতে সুবিধা করে দেবে।
এটি চট্টগ্রাম বন্দর ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে এবং চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে যোগাযোগ সহজতর করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সেতুর যানজটও কমে আসবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন টানেলটি ব্যবহার করতে পারবে, যা বছরে প্রায় ৭.৬ মিলিয়ন যানবাহনের সমান।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ ঢাকার সেতু ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, টানেলটি দেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ০.১৬৬ শতাংশ বাড়াতে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘টানেলটি চট্টগ্রাম মহানগরী, সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দরের দূরত্বও কমিয়ে দেবে। এটি অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান বলেন, টানেলটি দেশের অর্থনীতি এবং আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করবে।
টানেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান তিনি।