
রাঙামাটি প্রতিনিধি:
মঞ্চে ঐতিহ্যবাহী লাল-হলুদ পোশাক পরে তরুণীরা নৃত্যরত। তাদের হাতে হলুদ রঙের ছাতা। মঞ্চ সাজানো হয়েছে নানা রঙের বেলুন দিয়ে। মূলত পাহাড়ের সবচেয়ে বড় উৎসবকে স্বাগত জানাতেই রঙিন এ আয়োজন।
গতকাল বুধবার খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়। জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে শিল্পীরা গান ও নৃত্য পরিবেশন করে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু, মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই, চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু ও বাঙালির চৈত্রসংক্রান্তি এবং বর্ষবরণ উৎসবকে (বৈসাবি) স্বাগত জানান। এর আগে সকালে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে বৈসাবি উৎসবের প্রাথমিক আয়োজনের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান। আগামী ১২ এপ্রিল থেকে তিন দিনের মূল উৎসব শুরু হওয়ার কথা।
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের প্রধান এ উৎসব সামনে রেখে বুধবার রাঙামাটিতে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা পুরোনো বছরের সব দুঃখ-কষ্ট-গ্লানি মুছে দিয়ে বাংলার নতুন বছরে সবার সুখ-শান্তির প্রত্যাশা করেন।
বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে র্যালির উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায়। উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৃতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার। স্বাগত বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমণি তালুকদার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আদিবাসী পাহাড়ি শিল্পীরা মনোমুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে পৌরসভা প্রাঙ্গণ থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বর পর্যন্ত একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। আদিবাসী পাহাড়ি নারী-পুরুষ র্যালিতে অংশ নেন তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায় বলেন, দেশে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। অধিকাংশ কমিশন প্রতিবেদনে আদিবাসীদের স্বকীয়তা ও বাংলাদেশের বহুত্ববাদের কথা প্রতিফলিত হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এসব প্রতিবেদন তাঁর আশা পূরণে সক্ষম হয়নি। সামনের বিজু সাংগ্রাইং বৈসুক উৎসবটি সবার বাড়িতে সমৃদ্ধি বয়ে আনবে ও পাহাড়ে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঊষাতন তালুকদার বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক উৎসবের শুভদিনে যাতে সবাই একসঙ্গে নাচ-গানে, সুন্দর ও সাবলীলভাবে উদযাপন করতে পারে, সে জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু-বিষু-বিহু-চাংক্রান পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পাহাড়ি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব। বাংলা বর্ষের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব উদযাপন করে থাকে পাহাড়িরা। উৎসবটি উচ্চারণগতভাবে বিভিন্ন নামে উদযাপন করলেও এর নিবেদন একই। তাই উৎসবটি আদিবাসী পাহাড়িদের শুধু আনন্দের নয়; পার্বত্য চট্টগ্রামের সব সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীক বটে।
বিজু-সাংগ্রাই-বৈসু উৎসব উপলক্ষে নানা আয়োজন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে উদ্বোধনী দিনে খেলাধুলা, বলিখেলা ও কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। পরদিন রয়েছে আপ্যায়ন ও ঘুরে বেড়ানোর আয়োজন।