বদলে যাচ্ছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের নাম: শিগগিরই বিধিমালা জারি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সাজ্জাদ হোসেন:
লিটল বার্ডস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। নামের সঙ্গে এ স্কুলের লোগোও বেশ চমৎকার। প্রতিষ্ঠানের লোগোতে চোখ বোলালে দেখা যাবে- আড়মোড়া ভেঙে দুই পাখা মেলে ওড়ার চেষ্টা করছে ছোট্ট পাখি। নাম ও লোগোর মতো প্রতিশ্র“তিও অনেক এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কবির হোসেনের। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আমতলা মোড়ে আবাসিক ভবনে কিন্ডারগার্টেন হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখন চলছে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। পাশের অন্য একটি স্কুলে রেজিস্ট্রেশন করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লিটল বার্ডস স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষকই স্নাতক পড়ুয়া। পড়াশোনার পাশাপাশি তারা শিক্ষকতা করছেন। অর্থাৎ, পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর এ স্কুলটি। ঘিঞ্জি পরিবেশ। শ্রেণিকক্ষে নেই আলো-বাতাস। অথচ শ্রেণিভেদে এমন একটি স্কুলে ভর্তি ফি দুই থেকে চার হাজার টাকা। আর মাসিক বেতন ৮০০-১২০০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্কুলের পরিচালক কবির হোসেন বলেন, এ সরকার আসার পর থেকে শুনছি নতুন নীতিমালা করবে। কই, এখনো তো হলো না। ৪৫-৫০ হাজার স্কুল আছে। কয়টা বন্ধ করবে? বললেই তো হলো না। সরকারি স্কুলে কয়জন শিক্ষার্থী পড়তে পারে? সরকারি স্কুলে যা পড়ানো হয়, তার কোনটা আমরা পড়াচ্ছি না। বলার সময় অনেকে অনেক কথা বলেন। সরকারি স্কুলেও তো ক্লাসরুমে ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক সময় গাদাগাদি করে বসানো হয়। আমাদের এখানকার পরিবেশ তার চেয়ে অনেক ভালো। তবে নীতিমালা হলে সবাই যদি তা মেনে নিবন্ধন করেন, লিটল বার্ডস স্কুলের পক্ষ থেকে তিনিও মেনে চলবেন বলে জানান কবির হোসেন।
শুধু লিটল বার্ডস, নলেজ ভ্যালি, ক্যাম্ব্রিয়ান, রসুলপুর, সানরাইজ, আলোড়ণ, লিটল অ্যাঞ্জেলস, সজীব, অক্সফোর্ড, মীম স্কুলই নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে ৪৭ হাজারের বেশি এমন কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এসব স্কুলের ৯০ শতাংশেরই নিবন্ধন নেই। যে ১০ শতাংশ নিবন্ধন নিয়েছে, সেগুলো চলছে পার্টটাইম শিক্ষক দিয়ে। নেই নিয়ম-নীতির বালাইও। ছোট জায়গা ভাড়া নিয়ে আলো-বাতাসহীন ভবনে চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। গ্রন্থাগার, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যকর টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরেও দেখা গেছে, কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ছড়াছড়ি। নেই কোনো নিয়মনীতি। নিজেদের ইচ্ছে মত স্কুল খুলে দেদার ব্যবসা চালাচ্ছেন নাম সর্বস্ব এসব স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকরা। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুল নিয়ন্ত্রণে গত ফেব্রুয়ারি উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিধিমালা প্রস্তুত করে তা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সবশেষ আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংও শেষ। এখন শুধু এসআরও নম্বর পাওয়ার অপেক্ষায়। সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিধিমালাটি এখন চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হতে পারে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিধিমালা অনুযায়ী- দেশে কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি স্কুল নামে যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তা আর থাকবে না। সরকারি প্রাথমিক বাদে বাকি সব স্কুল হবে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। অনিবন্ধিত এসব স্কুলকে বিধিমালার গেজেট জারির তিনমাসের মধ্যে নিবন্ধন নিতে আবেদন করতে হবে। জারি হতে যাওয়া এ বিধিমালায় স্কুলে প্রাথমিক অনুমোদন, নিবন্ধন, নবায়ন, শিক্ষক নিয়োগ, ভবনের জমির আয়তন, তহবিল গঠন ও পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠান চালানো মালিকপক্ষ কোনো অজুহাত দেখাতে পারবেন না বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এসব বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ নিউজ পোস্টকে বলেন, চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি থেকে আমরা জোরেশোরে এটা (বিধিমালা) নিয়ে কাজ করেছি। এ বিধিমালা এখন চূড়ান্ত। আইন মন্ত্রণালয় থেকে এসআরও নম্বর পেলেই গেজেট জারি হবে। এতে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত হবে কিন্ডারগার্টেন বা নার্সারি স্কুলগুলো। বাংলা-ইংরেজি সব মাধ্যমের স্কুলকে এ বিধিমালা মেনে চলতে হবে। বিধিমালা জারির পর আমরা তিনমাস সময় দেবো। এর মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। যারা আবেদন করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বেসরকারি প্রাথমিকের বিধিমালায় যত নিয়মঃ
কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি, প্রিপারেটরি স্কুলের নামে শিক্ষাবাণিজ্যের লাগাম টেনে প্রাথমিক শিক্ষা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতেই মূলত নতুন এ বিধিমালা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিধিমালার যেসব বিষয় মানলেই কেবল স্কুলগুলো নিবন্ধন পাবে, তা নিচে তুলে ধরা হলো-
প্রাথমিক অনুমোদন প্রক্রিয়াঃ
বিধিমালার আওতায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানকারী নার্সারি, কেজি ও প্রিপারেটরি স্কুল এবং অন্য বেসরকারি বিদ্যালয় পরিচালনা করতে হবে। অনুমোদনের জন্য উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার (টিইও) মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি বিভাগীয় শহরে পাঁচ হাজার টাকা, জেলায় তিন হাজার এবং উপজেলায় দুই হাজার টাকা।
শিক্ষা কর্মকর্তা প্রাথমিক যাচাই শেষে তা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিইও) কাছে পাঠাবেন। তিনিই প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা চলমান প্রতিষ্ঠান চালু রাখার চ‚ড়ান্ত অনুমতি দেবেন। আবেদন করার ৬০ দিনের মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করে অনুমোদন বা বাতিল করতে হবে। প্রাথমিক অনুমতির মেয়াদ হবে সনদ দেওয়ার পর থেকে এক বছর। এ মেয়াদ শেষ হলে নবায়নের আবেদন ৩০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। তদন্ত ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নবায়ন করা যাবে না।
‘বেসরকারি প্রাথমিক’ হিসেবে নিবন্ধন প্রক্রিয়াঃ
প্রাথমিক অনুমোদনের পর নিতে হবে নিবন্ধন। শহরে প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নিবন্ধন ফি ১৫ হাজার টাকা। জেলায় ১০ হাজার এবং উপজেলায় আট হাজার টাকা। নিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভর্তি, উপস্থিতি ও শিক্ষা সমাপনের হার বিবেচনায় নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অনুমোদন দিলেও নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হবেন বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি)। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। নিবন্ধন সনদে সব ধরনের শর্ত উল্লেখ থাকবে। পাঠদান অনুমতি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন না নিলে অনুমতি বাতিল হয়ে যাবে। নিবন্ধন সনদ প্রতিষ্ঠানকে সংরক্ষণ করতে হবে।
নিবন্ধন নবায়ন প্রক্রিয়াঃ
মেয়াদ শেষে পুনরায় নিবন্ধন নবায়ন করতে হবে। কোনো স্কুলের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ দিন আগেই দাখিল করতে হবে আবেদন। নবায়নের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। নতুন নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত ফির ৫০ শতাংশ দিতে হবে। কোনো কারণে নিবন্ধন বাতিল হলে ফের আবেদন করা যাবে। বিধিমালার আগেও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আবেদন করে, তবুও তা এ বিধির আলোকেই নিষ্পন্ন হবে। ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ও এ বিধিমালার অধীনে ‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে গণ্য হবে। আগে নিবন্ধিতগুলো এ বিধিমালার আলোকে নবায়ন করতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াঃ
বিধিমালা অনুযায়ী- শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতোই। থাকতে হবে একই ধরনের প্রশিক্ষণ। পঞ্চম শ্রেণির বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ছয়জন শিক্ষক থাকবেন। শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে নির্দিষ্ট একটি বোর্ড থাকবে। এ বোর্ডে অবশ্যই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি থাকবেন। কোনো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা থাকলে, তা শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার একমাসের মধ্যে জানাতে হবে। শিক্ষকের বেতন-ভাতা বহন করবে বিদ্যালয়।
ব্যবস্থাপনা কমিটিঃ
প্রতিষ্ঠাতা বা কর্ণধারের খেয়াল-খুশি মতো স্কুল চালানোর পথও বন্ধের উদ্যোগ রয়েছে বিধিমালায়। স্কুল চালাবে ব্যবস্থাপনা কমিটি। প্রধান শিক্ষক, কর্মরত শিক্ষকদের একজন প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে দুজন এবং কাছাকাছি অবস্থিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কমিটিতে থাকবেন। প্রতিষ্ঠাতা দুজন না পাওয়া গেলে ইউএনও বা ডিসির প্রতিনিধি থাকবেন। শিক্ষক, অভিভাবকসহ সব প্রতিনিধি নির্বাচন দেখভাল করবেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
কমিটি গঠনের পর প্রথম সভায় প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধি বাদে বাকিদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচন করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাথমিক শাখা থাকলে তার জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটি ইউএনও বা ডিসি অনুমোদন দেবেন। ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। কমিটিতে থানা শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান শিক্ষক ও একজন অভিভাবক প্রতিনিধি সদস্য থাকবেন। কমিটির বৈঠক স্কুলেই করতে হবে। প্রতি দুই মাসে অন্তত একটি সভা হবে। কোরাম পূরণে তিনজন সদস্য আবশ্যক বিবেচিত হবে।
ব্যবস্থাপনা কমিটির যত কাজঃ
বিধিমালা মোতাবেক ব্যবস্থাপনা কমিটি পাঁচ ধরনের কাজ বাস্তবায়ন করবে। এগুলো হলো- শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ, তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ, শৃঙ্খলার ব্যবস্থা, বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা এবং বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়ন।
যেভাবে গঠন হবে তহবিল ও আয়-ব্যয়ঃ
নিবন্ধন পেতে হলে বিদ্যালয়ে সংরক্ষিত ও সাধারণ নামে দুটি তহবিল থাকতে হবে। সংরক্ষিত তহবিলে এলাকা অনুযায়ী- স্থায়ী আমানত বা সঞ্চয়পত্র আকারে থাকতে হবে। এর মধ্যে মেট্রোপলিটনে এক লাখ, জেলায় ৭৫ হাজার, উপজেলা ও পৌরসভায় ৫০ হাজার এবং ইউনিয়নে ২৫ হাজার টাকা। ব্যবস্থাপনা কমিটির পূর্বানুমোদন ছাড়া এ টাকা তোলা যাবে না।
অন্যদিকে সাধারণ তহবিলে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুদানের অর্থ থাকবে। সভাপতি ও সদস্য সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে উভয় তহবিল পরিচালিত হবে। ব্যক্তির নামে বিদ্যালয় স্থাপন করতে হলে পাঁচ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করতে হবে। এ তহবিলের লাভের টাকা নিয়ম মেনে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে।
সঞ্চয়পত্র, আমানত ও অনুদানের অর্থ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় ব্যয়ের পর অবশিষ্ট থাকলে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীদের কল্যাণে ব্যয় করা যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আয়-ব্যয়ের হিসাব সংক্রান্ত পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেবে।
৩০ শিক্ষার্থীর জন্য এক শিক্ষকঃ
‘বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে নিবন্ধন পেতে স্কুলে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত হবে ৩০:১, অর্থাৎ প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকবেন। অনুপাত পূরণ হলেই কেবল জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদন সাপেক্ষে শাখা খোলা যাবে। স্কুল পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চলবে। কমপক্ষে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান থাকতেই হবে। একাধিক ক্যাম্পাস খোলা যাবে না। ইচ্ছামতো টিউশন ফি নির্ধারণ করা যাবে না। পুনঃভর্তি বা নবায়নের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনুদান আদায় করা যাবে না। তবে সহপাঠ কার্যক্রম, বিশেষ সুবিধা ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফি আদায় করা যাবে। এক্ষেত্রে আয়-ব্যয় বিবরণী অভিভাবকদের জানাতে হবে।
স্কুলের আয়তনঃ
ভাড়া কিংবা স্থায়ী ভবনে হোক, মহানগর এলাকায় ন্যূনতম ৮ শতক, পৌরসভায় ১২ শতক এবং অন্য এলাকায় ৩০ শতক জমিতে হতে হবে। ভবন ও ভ‚মি ভাড়া নেওয়া যাবে। বিধিমালার আগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ভ‚মির পরিমাণ কম হলে সেক্ষেত্রে এ নিয়ম কার্যকর হবে না। বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ এবং শিক্ষকদের কক্ষ থাকতে হবে।
যেমন হবে পাঠ্যবইঃ
বিদ্যালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অনুমোদিত পাঠ্যবই অবশ্যই পড়াতে হবে। পাশাপাশি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দুটি পাঠ্যবই পড়ানো যাবে। তবে ইচ্ছামতো বই পাঠ্যভুক্ত করা যাবে না। পাঠ্যবই নির্বাচনে শিশুদের ধারণক্ষমতার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বই নির্বাচনে যেন দেশের সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কিছু না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম থাকতে হবে। ১৯৮৯ সালের জাতিসংঘ শিশু সনদের আলোকে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার, বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেট থাকতে হবে। শিক্ষা সফর, চিকিৎসা, খেলার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মালিকদের দাবি তহবিল ও জমির শর্ত শিথিলেরঃ
নতুন বিধিমালায় দুটি তহবিল গঠনের যে নিয়ম রাখা হয়েছে, তাতে সংরক্ষিত তহবিলে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা থাকতে হবে। এটাকে অযৌক্তিক বলছেন কিন্ডারগার্টেনের মালিক-পরিচালকরা। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে কমপক্ষে আট শতক জমি থাকা বাধ্যতামূলক করাটাও কঠোর সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী নিউজ পোস্টকে বলেন, ‘দেখুন কেউ মতিঝিলে বা গুলশানে একটা স্কুল করবে। এমন জায়গায় আট শতক জমি পাওয়া কী সম্ভব? তাহলে কত টাকা বাজেট দরকার বা এতখানি জমি পাবেনইবা কীভাবে? এটা একেবারে অযৌক্তিক। আমরা তিন-চার শতক জমি করার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, নতুন বিধিমলায় সংরক্ষিত ও সাধারণ তহবিল রাখার নিয়ম করা হয়েছে বলে জেনেছি। সংরক্ষিত তহবিলে পাঁচ লাখ টাকা জমা রাখার নিয়ম শিথিল করে তিন লাখ করার দাবি আমাদের। এটা করলে দ্রুত নিবন্ধনে আগ্রহী হবেন মালিক-পরিচালকরা।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, একটি স্কুল হবে, সেখানে শিশুরা পড়াশোনা করবে। অবশ্যই সেখানে আলো-বাতাসপূর্ণ পরিবেশ থাকতে হবে। বিধিমালায় যে জমির ওপর স্কুল করার নিয়ম রাখা হয়েছে, তা সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। আর সংরক্ষিত তহবিলে যে টাকা থাকার নিয়ম করা হয়েছে, তাও স্বাভাবিক।
আগের নীতিমালায় নিবন্ধন চায় পাঁচ হাজার স্কুলঃ
আগের বিধিমালায় নিবন্ধন পেতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রায় পাঁচ হাজার আবেদন জমা পড়ে। সেগুলো জটিলতায় এখনো আটকে রয়েছে। নতুন বিধিমালা করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় আবেদন করেও তারা নিবন্ধন পাননি। আগের নীতিমালায় আবেদনকারীদের নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মালিক-পরিচালকরা।
রামপুরার উলান রোডের সপ্তবর্ণ বিদ্যা নিকেতনের পরিচালক মারুফা খান বছর দু’য়েক আগেই নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু এখনো নিবন্ধন পাননি তিনি। সবশেষ জুলাই মাসে অধিদপ্তরে যোগাযোগ করলে তাকে আগস্টে হবে বলে জানানো হয়। তবে এখনো তিনি জানেন না তাকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে কি না।
মারুফা খান নিউজ পোস্টকে বলেন, আমি আবেদন করে রেখেছি, নিবন্ধন পাইনি। আমরা যারা অনেক কষ্টে আবেদন করে রেখেছি, তাদের নিবন্ধনটা আগের নীতিমালা অনুযায়ী দিয়ে দিলে ভালো হয়। পরে যখন আমরা নবায়ন করবো, তখন বর্তমান বিধিমালার আলোকে নিয়ম মেনে করবো।
কিন্ডারগার্টেন ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহারেরও একই দাবি। তিনি বলেন, এটা তো আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। বছরের পর বছর আমাদের ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি- যারা আবেদন করে রেখেছেন, তাদের আগের নীতিমালা মেনেই নিবন্ধন দেওয়া হোক। তাহলে আবেদন ও নিবন্ধনের চাপটাও কমবে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে দেখার কথা জানিয়েছেন সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি বলেন, এ দাবিটা আমরা আলাপ করে দেখবো। তবে বিধিমালায় বলা আছে, নতুন বিধিমালা মেনেই সবাইকে নিবন্ধন নিতে হবে। যারা আবেদন করে রেখেছেন, তাদেরও এ নিয়ম মানতে হবে। তারপরও বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।