বরিশাল প্রতিনিধি:
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে ফিরেছেন বরিশালের পুলিশ সদস্যরা। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের টানা ছয় দিন পরে তারা সড়কে ফিরলেন। এতে করে প্রাণসঞ্চার হয়েছে আইনশৃঙ্খলায়। এ সময় মিষ্টি ও ফুল দিয়ে পুলিশকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
সোমবার (১২ আগস্ট) বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকা ঘুরে এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।
নগরী ঘুরে দেখা গেছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, যেমন-রূপাতলী বাস টার্মিনাল, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল, চৌমাথা, আমতলা মোড়, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সড়ক, সদর রোড, জেনারেল হাসপাতাল মোড়, লঞ্চঘাট এলাকায় মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। এ সময় ট্রাফিক সদস্যদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও সহায়তা করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি স্কাউটস, বিএনসিসি, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন।
সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোর মধ্যে যেগুলো সন্দেহ হয় সেগুলো তল্লাশি, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালকদের সতর্ক করা এবং প্রতিটি সড়ক দুটি লেনে বিভক্ত করে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে কোনো যানবাহনের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের খবর পাওয়া যায়নি।
জিলা স্কুল মোড়ের ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে পরা শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, আমি সদর রোডে সড়ক নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে মেডিকেলে যাচ্ছিলাম। আমার কাছে হেলমেট না থাকায় পুলিশ সদস্যরা আমাকে আটকে দেয়। তাদের কাছে শিক্ষার্থী পরিচয় দিলেও পুলিশ বলেছে, আইনের কাছে সবই সমান। আমি শুনে আনন্দিত হয়েছি। আমিও চাই আমার এই অন্যায়ের জন্য শাস্তি হোক, কারণ এমন বৈষম্যহীন ব্যবস্থার জন্য আমিও এতদিন সংগ্রাম করেছি।
আমতলার মোড় সিগন্যালে কথা হয় সরকারি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি বলেন, রূপাতলীতে আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি তল্লাশি করেছে শিক্ষার্থীরা। আমার কাছে ভালো লেগেছে। আমার সন্তানের বয়সী ছেলেরা দেশ গঠনে এভাবে স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসেছে, এটি অবাক করার মতো।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) তানভীর আরাফাত বলেন, সকাল থেকেই ট্রাফিক সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ তাদেরকে সহায়তা করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বাধা বা প্রতিকূল পরিস্থিতি কোথাও হয়নি। দিনে দিনে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আরও অ্যাক্টিভ হবে।
এদিকে মেট্রোপলিটন এলাকার সবগুলো থানারও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে থানায় আসতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। সবার উপস্থিতিতে পরে থানা কম্পাউন্ডে রোল কল করা হয়। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
মেট্রোপলিটন এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লোকমান হোসেন বলেন, আমরা থানার কার্যক্রম শুরু করেছি। ইতোমধ্যে কীভাবে কাজ করতে হবে এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার স্যার। জনবান্ধব হয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো।
মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি বরিশাল জেলার সবগুলো থানা কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন স্থানে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছে পুলিশ সদস্যরা।
জেলা পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের সহায়তা করছেন। পুলিশ কাজে ফেরায় বিভিন্ন এলাকায় মিষ্টি বিতরণ ও পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়েছেন তারা। আমরা কোথাও প্রতিবন্ধকতা অনুভব করছি না।
এর আগে সময় বেধে দিয়ে পুলিশ সদস্যদের কাজে ফেরার আহ্বান জানান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পাশাপাশি ঘোষণা দেন, পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের।