বাংলাদেশ পুলিশ বøাড ব্যাংকের ১৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত

প্রকাশিত: ৮:২৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে বাংলাদেশ পুলিশ বøাড ব্যাংকের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।


ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, এবং মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।


অনুষ্ঠানের শুরুতে কেক কেটে ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেন প্রধান অতিথি ও আমন্ত্রিত অতিথিগণ। পরে আজীবন রক্তদাতা হিসেবে নিবন্ধনকৃত সদস্যরা শপথবাক্য পাঠ করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, বর্তমান কমিশনার যখন ডিসি হেডকোয়ার্টার্স ছিলেন তখন তিনি উদ্যোগ নিয়ে এ পুলিশ বøাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশ পুলিশ বøাড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের অসুস্থ সদস্যের পাশাপাশি জনগণের পাশে দাঁড়াতে পেরেছে। নিজের রক্ত দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় পুলিশ বদ্ধপরিকর। বøাড ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ব্যাগ রক্ত বিতরণ করা হয়েছে।


আইজিপি বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে প্লাজমা দিয়ে আরেকজন করোনা আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করতে ভ‚মিকা রেখেছেন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় ৫ হাজার ১০০ ব্যাগ প্লাজমা সরবরাহ করে করোনায় আক্রান্ত বহু মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে ভ‚মিকা রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ বøাড ব্যাংক। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এতো পরিমাণ প্লাজমা প্রদানের এটা একটি রেকর্ড।


মূখ্য আলোচক উপাচার্য ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যে জায়গাটির কথা কখনো ভুলা যাবে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণের বিরুদ্ধে পুলিশের রাইফেল থেকেই গর্জে উঠে প্রতিরোধের প্রথম বুলেট, সূচিত হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছিলেন আপনারা রক্ত দিয়ে মানুষকে বাঁচাবেন। রক্ত নিয়ে গবেষণা করবেন। বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ বøাড ব্যাংক। এই দেশের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নিজের রক্ত দিয়েছিলেন। এই বিজয়ের মাসে আপনারা যারা রক্ত দান করছেন আমি মনে করি তারা কিছুটা হলেও জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করছেন।
উপাচার্য বলেন, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যে কোন সুস্থ পুরুষ তিন মাস ও যে কোন সুস্থ নারী চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন। আজ আপনারা অসহায় ব্যক্তিদের রক্ত দেওয়ার শপথ করেছেন। আপনারা গত করোনা মহামারিতে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুলিশ বøাড ব্যাংক থেকে ৫১০০ ব্যাগ প্লাজমা দিয়েছে। এটা পুলিশ ছাড়া আর কেউ করে নাই।
তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাদের নিরাপত্তার জন্য দিন রাত পরিশ্রম করছেন। দেশের জন্য কাজ করছেন। আপনার এই দায়িত্ব পালন দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ভ‚মিকা পালন করছে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকে পবিত্র ভ‚মিতে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল। আমার সামনে যে পুলিশ সদস্যরা বসে আছেন এই বয়সের পুলিশ সদস্যরাই সেদিন রক্ত দিয়েছিলো এই রাজারবাগের মাটিতে। মৃত্যু অবধারিত জেনেও সম্মুখযুদ্ধ করার দুঃসাহস পেয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ থেকে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে যে আহবান জানিয়েছিলেন সেই আহবানে প্রথম সাড়া দিয়েছিলো এই রাজারবাগের পুলিশ।
তিনি বলেন, পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রদেরও এই বøাড ব্যাংকের আওতায় আনবো। রক্তের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ পুলিশ বøাড ব্যাংকের অবদান অব্যাহত থাকবে।


ডিএমপি প্রধান বলেন, করোনাকালীন সময়ে পুলিশ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। করোনার সময় আত্মীয়-স্বজন ও কাছের মানুষ যখন ছেড়ে গিয়েছিলো পুলিশ তখন কাউকে ছেড়ে যায়নি। করোনাকালীন সময়ে পুলিশের যে অবদান শুধু বাংলাদেশেই নয় সারা বিশ্বে পুলিশের অবদান ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সময়ে পুলিশ প্লাজমা দিয়ে মুমূর্ষু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা সারা বিশ্বে প্রশংসনীয়।
অনুষ্ঠানে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স এন্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল (সিপিএইচ), রাজারবাগ এর পরিচালক শেখ মো. রেজাউল হায়দার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ দাউদ আদনান, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ‘রক্তে মোরা বাঁধন গড়ি, রক্ত দেব জীবন ভরি’ এ সেøাগানকে সামনে রেখে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর চালু করে ‘পুলিশ বøাড ব্যাংক’। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ডোনারদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও মুমূর্ষু রোগীকে জরুরীভাবে রক্ত প্রদানসহ নানাবিধ মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের ২য় তলায় ‘পুলিশ বøাড ব্যাংক’এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।