নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমাদের গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সংগঠন। শিগগিরই বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন তারা। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে নরেন্দ্র মোদীর কাছে ওই স্মারকলিপি পাঠানো হয়।
এতে অভিযোগ করা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা- খাগড়াছড়ি, বান্দারবন ও রাঙামাটিতে চাকমা এবং অন্যান্য গোষ্ঠীদের ঘরে ধারাবাহিক হামলা চলছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০ জনের। পোড়ানো হয়েছে চাকমা, কুকি, ব্রু ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর হাজারেরও বেশি বাড়ি-ঘর, ধর্মীয় উপাসনালয়, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
আরও অভিযোগ করা হয়, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের দপ্তর থেকে বিবৃতি দিয়ে পাহাড়ের ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন জানানো হয়েছে। তিন জেলায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। তবুও উত্তেজনা কমেনি। এমনকি, চট্টগ্রামের সমতল এলাকাতেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। কয়েক দশক আগে ত্রিপুরা, মিজ়োরামের মতো রাজ্যে পালিয়ে গিয়েছিলেন চাকমা, ব্রু, কুকি-চিন গোষ্ঠীর অনেক মানুষ। বর্তমান পরিস্থিতিতেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নতুন করে শরণার্থী স্রোত নামতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় নিরাপত্তা এবং স্বশাসনের দাবি তুলে ‘মার্চ ফর আইডেন্টিটি’ আন্দোলন শুরু করেছে চাকমাসহ কয়েকটি গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই বাইরে থেকে এসে বসতি গড়া লোকেরা চাকমাদের ওপরে হামলা, জমি দখল এবং দেশছাড়ার জন্য হুমকি দিতে শুরু করেছে। কয়েকশো বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকি-চিন গোষ্ঠীর বাস। ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের অঞ্চলগুলো নিয়ে কুকি স্বশাসিত অঞ্চলের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
সম্প্রতি কুকি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনের নামে নতুন করে অভিযান শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গি দমন অভিযানের নামে কুকিদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ করা হচ্ছে। ফলে উত্তেজনা বাড়ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনবিন্যাস বদলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জিয়াউর রহমানের আমলে প্রায় ৫০ হাজার সমতলের মানুষকে পাহাড়ে বসতি গড়ে দেওয়া হয়। ‘সেটলার’ নামে পরিচিত সেই গোষ্ঠী আজ সংখ্যায় বহুগুণ বেড়ে চাকমা ও অন্য জাতিদের অস্তিত্বের সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। আর সেখান থেকেই সংঘাতের সূত্রপাত। নতুন সরকারের আমলে তাদের ‘আদিবাসী’ পরিচয়ও মুছে ফেলার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করছে চাকমা সংগঠনগুলো।