বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের বিবৃতির প্রতিবাদে ৩২১ প্রবাসীর চিঠি
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
সম্প্রতি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলকে একটি বিবৃতি দিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্য। এর প্রতিবাদে চিঠি পাঠিয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি বিজ্ঞানী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও চাকরীজীবীসহ নানা পেশার ৩২১ প্রবাসী। তারা চিঠিতে বলেছেন, ‘ওই ৬ সদস্যের বিবৃতি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে লেখা ও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র।’
গত ১২ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ সদস্যের বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এমইপি ইভান স্টেফানেক (স্লোভাক প্রজাতন্ত্র), মাইকেলা সোজদ্রোভা (চেক প্রজাতন্ত্র), আন্দ্রে কোভাতচেভ (ইপিপি, বুলগেরিয়া), কারেন মেলচিওর (ডেনমার্ক), জাভিয়ের নার্ট (স্পেন) এবং হেইডি হাউতালা (ফিনল্যান্ড)।
এর প্রতিবাদে ৩২১ প্রবাসী বাংলাদেশির স্বাক্ষর সংবলিত চিঠিটি পাঠানো হয়েছে ‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ’-এর ব্যানারে। প্রতিবাদ লিপির এই কপি ইইউ পার্লামেন্টের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেলসহ ওই ছয় সংসদ সদস্যকেও পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) সংগঠনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে প্রবাসী জানিয়েছেন, এই ছয় সংসদ সদস্যের বাংলাদেশের রাজনীতি ও সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। ইইউ পার্লামেন্টের দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের জন্য যে প্রতিনিধি দল রয়েছে, সেই সব কমিটির সদস্য না হয়েও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খর্ব করতেই তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে চিঠিটি লিখেছেন।
চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও বলপূর্বক গুম শুরু হয়। মানবধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রসিডেন্ট জিয়ার সাড়ে পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে কয়েক হাজার সামরিক বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তার বিএনপি সরকার বাংলাদেশের সংবিধান (‘পঞ্চম সংশোধনী’) পরিবর্তন করে যা ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এবং ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ এর মধ্যে সরকারের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপকে বৈধ করে।১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অধীনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকাকালে তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের নির্যাতন, অপহরণ ও হত্যার ধারা অব্যাহত রেখেছিল।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে, ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ২০০৪ সালের ১২ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এবং জামায়াতে ইসলামীর শাসনামলে গঠিত হয়েছিল। তারা ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও নির্যাতন করে এবং তাদের মধ্যে মোট ১৫০০ জনকে ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করে।’
২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচন প্রতিহত করতে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অভিযোগ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সেই সময় তারা শতাধিক গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের পেট্রোল বোমা, হাতে তৈরি বোমা এবং অন্যান্য ধরনের সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ সদস্যসহ প্রায় ২০০ ব্যক্তি নিহত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচনে অংশ নেয় এবং কয়েকটি আসনে জয়লাভ করে। অন্য সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।’ ‘মধ্যরাতের নির্বাচনের’ অভিযোগটি ছিল গুজব ও মিথ্যা তথ্যের কাজ; যা কখনও প্রমাণিত হয়নি বলেও চিঠিতে বলা হয়।
২০১১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট অনির্বাচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনকে অবৈধ ঘোষণা করে উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, ‘পরবর্তীতে ২০১১ সালের জুন মাস ৩৪৫ সদস্যের আইনসভা সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী সংসদে ২৯১ জন সংসদের সম্মতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে পাস করে।’
এছাড়া ‘বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ’ চিঠিতে আরও জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যেসব মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন, সেগুলো ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের মামলা।
তারা আরও জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের অবস্থা কেমন ছিল, তা সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা বাঞ্ছনীয় হবে। বিশেষ করে, যদি আমরা ২০০১ থকে ২০০৬ সময়কালের কিছু ঘটনা বিবেচনা করি, তাহলে আমরা একটি পরিষ্কার চিত্র পেতে পারি। বার্লিন ভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) এর ‘দুর্নীতি উপলব্ধি সূচক (সিপিআই)’ অনুসারে, বিএনপি কর্তৃক লাগামহীন দুর্নীতি ও অর্থপাচারের কারণে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পরপর পাঁচ বার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।‘
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জাতিসংঘ স্বীকৃত ‘মধ্যম আয়ের’ অবস্থা বজায় রাখতে অক্লান্তভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উন্নিত হওয়ার আনুষ্ঠানিক সময়সীমা অর্জনের লক্ষ্যে, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের এসডিজি লক্ষ্য পূরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।’
তাই বাংলাদেশ সিভিল সোসাইটি ইন ইউরোপ মনে করে, এই মুহূর্তে ভিসা সীমাবদ্ধতার প্রস্তাব করা বা জিএসপি প্রণোদনা হাস করা প্রভৃতি বিষয়গুলো, কোনও ভালো কূটনৈতিক সমাধান নয়। এগুলো শুধু একটি দেশ এবং দেশটির শান্তিকামী নিরীহ জাতির ক্ষতি করবে। তাই বাংলাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্রের লক্ষ্যে সারা বিশ্বের রাজনীতিবিদদের এই ধরনের চিন্তাভাবনা এড়িয়ে চলা উচিত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইউরোপের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।