ডেস্ক রিপোর্ট :
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে জো বাইডেন সরে দাঁড়ালে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা সম্পর্কে অবগত বাইডেনের প্রচার শিবির, হোয়াইট হাউজ ও ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সাতটি সিনিয়র সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমন আভাস দিয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গত সপ্তাহে বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স ডেমোক্র্যাট শিবিরে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিতর্কে তার কথার খেই হারিয়ে ফেলা এবং অনেক সময় বক্তব্য অসংগত ছিল। ফলে শঙ্কা ছড়িয়েছে, বাইডেন হয়তো দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো শারীরিকভাবে সক্ষম না। তাকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বানও জোরালো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হলে ৫৯ বছর বয়সী হ্যারি বাইডেনের প্রচার শিবিরের সংগৃহীত তহবিল ও প্রচারের অবকাঠামো পেয়ে যাবেন। যেসব বিকল্প প্রার্থীর কথা উঠে আসছে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন তিনি। এছাড়া জনমত জরিপ অনুসারে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে তাদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন তিনি ।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) প্রকাশিত রয়টার্স/ইপসোস জরিপের ফল অনুসারে, ট্রাম্পের চেয়ে এক পয়েন্ট শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে হ্যারিস। জরিপে মার্জিন এরর সাড়ে তিন শতাংশ পয়েন্ট। যা দেখিয়ে দিচ্ছে, তিনি প্রায় বাইডেনের মতোই শক্তিশালী।
ইতোমধ্যে তিনি প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের জন্য নিরীক্ষায় পাস করেছেন এবং রিপাবলিকানদের কঠোর অনুসন্ধানও উতরে গেছেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য জিম ক্লিবার্ন, ২০২০ সালে বাইডেনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বলেছেন, বাইডেন সরে দাঁড়ালে ডেমোক্র্যাট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে হ্যারিসকে তিনি সমর্থন দেবেন।
২০০৮ ও ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের প্রচারণায় কাজ করা ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাটিক কৌশলবিদ মাইকেল ত্রুহিলো বলেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্টকে ছাড়িয়ে মনোনয়ন পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
বাইডেন শিবির অঙ্গরাজ্যগুলোর প্রাইমারিতে ৩ হাজার ৮৯৪ জন ডেলিগেট পেয়েছে। মাত্র কয়েক ডজন ‘আনকমিটেড’ ডেলিগেট রয়েছেন, যারা এখনও বাইডেনকে সমর্থন দেননি। চলতি মাসের শেষদিকে ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা বাইডেনকে মনোনীত করতে পারেন। আগস্টে ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির সাবেক অন্তর্র্বতী চেয়ার ডনা ব্রাজিল আগস্টে জাতীয় কনভেনশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবেন। তিনি বলেছেন, বাইডেন যদি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তাহলে তার হয়ে আসতে পারার মতো ব্যক্তি হলেন হ্যারিস। মানুষের হয়তো অপর কোনও সুপার হিরোর স্বপ্ন থাকতে পারে। কিন্তু এখানে একটি প্রক্রিয়া বিদ্যমান। এখন পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ছেন বাইডেন-হ্যারিস। ফলে লড়াইয়ে দ্বিতীয় ব্যক্তি তিনি। বাইডেন এখনও দলের মনোনীত প্রার্থী।
একাধিক ডেমোক্র্যাটিক কৌশলবিদ মনে করেন, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও নারী ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাদ দিয়ে অপর কোনও প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে কৃষ্ণাঙ্গ ও নারী ভোটারদের মধ্যেও বিরোধিতার জন্ম দিতে পারে। এরা ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর জয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চারটি সূত্র বলেছে, বিতর্কের পর অনেক জল্পনা হলেও তা থেকে দূরে থেকেছেন হ্যারিস। কারণ প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের কয়েকজন মনে করেন না যে তিনি ট্রাম্পকে হারাতে পারবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে কখনও নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। হ্যারিস নিজেও বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে। গত বছর হোয়াইট হাউজ ও বাইডেন শিবিরের একান্ত আলাপে তাকে বোঝা হিসেবে উল্লেখ করে উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছিল। এরপর গর্ভপাত ইস্যুতে নিজের পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পান। কিন্তু তাতেও জনসমর্থন খুব একটা বাড়েনি। বাইডেনের প্রচার শিবিরের প্রকাশিত অ্যাপ্রুভাল রেটিং ৪০-এর নিচে। ট্রাম্পকে হারানোর ক্ষেত্রে বাইডেন ও কমলা হ্যারিস উভয়েই পিছিয়ে আছেন।
অবশ্য এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কোনও ইঙ্গিত দেননি জো বাইডেন। নর্থ ক্যারোলাইনায় তার লিখিত ভাষণ পাঠের পর প্রচার শিবির এখন অনুপ্রাণিত। যদিও তার সরে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বানও জোরালো হচ্ছে।