জেলা প্রতিনিধি,বগুড়াঃ
বগুড়ায় শহরের একটি বসতবাড়িতে রহস্যজনক বিস্ফোরণে চারজন আহত হয়েছেন। রোববার (২৮ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে শহরের মালতিনগর দক্ষিণ পাড়ার রেজাউল ইসলামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।রেজাউল ইসলাম মালতিনগর এলাকায় খড়ির ব্যবসা করেন। বাড়িটি পটকা তৈরির ছোটখাট একটি কারখানা ছিল। তার মা রেজিয়া বসতবাড়িতে পটকা তৈরি করতেন বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
আহতরা হলেন- রেজাউলের স্ত্রী রেবেকা (৩৮), মেয়ে সুমাইয়া আক্তার (১৫), ভাতিজি জিম (১৬) ও প্রতিবেশীর মেয়ে তাসনিম বুশরা (১৪)। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তাসনিম বুশরার অবস্থা আশঙ্কাজনক। বুশরাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকায় নিয়ে গেছে তার পরিবার।
বিস্ফোরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বগুড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল। তবে তিনি বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে কোনো কিছু নিশ্চিত করতে পারেননি।তিনি বলেন, রাত ৯টার দিকে মালতিনগরের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের খবর পাই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি টিনের বসতবাড়ি একাংশ ধসে পড়েছে। সেখানে তিনটি গ্যাসের সিলিন্ডার পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো অক্ষত ছিল। বিস্ফোরণের মূল কারণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।
স্থানীয়রা জানান, রোববার রাত ৯টার দিকে হঠাৎ করে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘরের টিনের চাল উড়ে যায় এবং কংক্রিটের দেয়াল ধসে পড়ে। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া সদরের বনানী ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আশরাফ উদ্দিন বলেন, ঘরটি আমরা ঘিরে রেখেছি। তবে ঢাকা থেকে বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা আসছেন। তারা সরেজমিনে দেখে বিস্তারিত জানাবেন।
স্থানীয়দের কাছে আরো জানা যায়, রেজাউলের বাড়িতে পটকা তৈরি করা হতো। এই পটকা তৈরির কাজ করতেন রেজাউলের মা রেজিয়া। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে পটকা বানিয়ে বিক্রি করা হয়েছিল। এসবের মধ্যে বেশ কিছু অবিক্রিত পটকা রেজিয়ার ঘরে রাখা ছিল। রাতে সেই ঘরে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই সময় বাড়িতে রেজাউলের স্ত্রী রেবেকা, তার মেয়ে সুমাইয়া আক্তার, ভাতিজি জিম ও প্রতিবেশী তাসনিম বুশরা অবস্থান করছিলেন।
বিস্ফোরণে বসতবাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। ধসে গেছে বাড়ির সামনের দুটি ঘরের ইটের দেয়াল। বাড়িতে তিনটি গ্যাস সিলিন্ডার থাকলে তা বিস্ফোরণ হয়নি। তবে ওই বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে।রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। নামাজ শেষে ওখানে ছিলাম। এমন সময় বিকট শব্দ হয়। আমি ভেবেছিলাম ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়েছে। পরে লোকজন বলল আমার বাড়িতে নাকি আগুন লেগেছে। খবর পেয়ে এসে দেখি এই ঘটনা।
পটকা তৈরির বিষয়ে রেজাউল ইসলাম জানান, তার মা রেজয়া পটকা তৈরি করতেন। রোজার ঈদের সময় বানিয়েছিলেন। কিছু পটকা তার ঘরে থাকতে পারে। বিস্ফোরণ তার মায়ের ঘর থেকেই হয়েছে। বাড়িতে মোট তিনটা গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল। এর মধ্যে একটি তার মায়ের ঘরে থাকতো।
এ ঘটনায় রাত ১২টার দিকে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী পরিদর্শন করে তিনি বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা খোঁজ নিয়েছি। বাড়িতে গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল। আবার তারা পটকা তৈরি করতেন এটাও পুলিশ জানতে পেরেছে। আমরা পটকার আলামত পেয়েছি।
জেলা পুলিশ সুপার বলেন, তবে কিভাবে বিস্ফোরণ ঘটল তা সুনিশ্চিত করা যাচ্ছে না। হয়তো গ্যাসের লিকেজের সঙ্গে পটকা তৈরির ফসফরাস মিশে এ ঘটেছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের কাছে থেকে বিষয়টি জানার চেষ্টা করব। আর বসতবাড়িতে পটকা তৈরির অনুমোদন নেই। এ বিষয়েও আমরা খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছি।