বেড়াতে আসা বন্ধু ও তার ভাতিজাকে তুলে দিলেন অপহরণকারীদের হাতে, এরপর…

প্রকাশিত: ১২:১৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

 

বিগত দুবছর আগে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার আবদুল আমিন নামের যুবকের সাথে পরিচয় হয় বগুড়ার মো. সবুজের। বন্ধুত্বের গভীরতায় একে অপরের বাড়িতে বেড়াতো। সেই সূত্রে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি আবদুল আমিনের আমন্ত্রণে সবুজ তার ভাতিজা মেহেদী হাসানকে নিয়ে টেকনাফে বেড়াতে আসেন। কিন্তু বেড়াতে আসা বন্ধু সবুজ ও ভাতিজা মেহেদীকে কৌশলে রোহিঙ্গা অপহরণ চক্রের হাতে তুলে দেন আবদুল আমিন।

অপহরণকারীরা তাদের দুজনকে গোপন আস্থানায় নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও ধারণের পর সবুজের স্ত্রীর কাছে পাঠায়। দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। সবুজের স্ত্রী মুক্তিপণ হিসেবে বিকাশ ও নগদে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পাঠান। কিন্তু এরপরও তাদের মুক্তি মেলেনি।

নিরুপায় হয়ে ২ মার্চ সবুজের বোন সুলতানা অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে সবুজ ও মেহেদী হ্নীলার আবদুল আমিনের বাড়িতে বেড়াতে এসে অপহরণের শিকার হন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়।

পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকার লেনদেনের সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণ চক্রের অবস্থান নিশ্চিত হয় পুলিশ। এরপর টানা দুই দিন অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে গহীন পাহাড় থেকে উদ্ধার করা হয় অপহৃত সবুজ ও মেহেদীকে। এসময় অপহরণে জড়িত তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে মুক্তিপণের জন্য দেয়া টাকাও।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার ইসলাম মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম (৩৫), একই এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল (১৯), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে মো. ইউসুফ (৩০)।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, সবুজ ও মেহেদীকে অপহরণকারী চক্রের হাতে তুলে দেয়া আবদুল আমিনকে গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি। তবে, গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অপহরণকারীর একটি চক্রকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অপহরণ চক্রের বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে উল্লেখ করে ওসি আরো বলেন, অপহরণ চক্রের অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

অপরদিকে, ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় টেকনাফের বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার মেরিন ড্রাইভে ইজিবাইকসহ চালক মোহাম্মদ ফারুককে (১৬) অপহরণ করা হলেও তাকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফারুক টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের লামার বাজার এলাকার নুরুল হকের ছেলে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের তথ্যমতে, গত ১৪ মাসে টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন এলাকা হতে সোয়া তিনশ জনকে অপহরণ করা হয়েছে। এদের মাঝে টেকনাফে অপহরণের শিকার হন প্রায় ২৩০ জন। এদের অধিকাংশই মুক্তিপণে ফিরেছেন। কয়েকজন খুনেরও শিকার হন।