বোমা হামলায় গাজার মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
- স্থল অভিযানে হামাসের প্রতিরোধের মুখে ইসরায়েলি সেনা
- জাতিসংঘে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান
- ইসরায়েলে গাজার হাজার হাজার শ্রমিক আটক
ডেস্ক রিপোর্ট :
গাজায় বড় ধরনের বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার রাতে এই বোমা হামলায় গাজার মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো গাজা বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা অন্ধকারে ঢেকে গেছে। এই ব্ল্যাকআউটের কারণে গাজার গণনৃশংসতা ঢাকা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থল অভিযানে গাজায় হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এদিকে জাতিসংঘে মানবিক যুদ্ধবিরতি পাশ হলেও ইসরায়েল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজা থেকে ইসরায়েলে কাজ করা কয়েক হাজার শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।
নৃশংসতা ঢাকা পড়ার আশঙ্কা: শুক্রবারের হামলা এত নৃশংস ছিল যে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা এই ধরনের হামলা আগে দেখেননি। মোবাইল ও ইন্টারনেট কোম্পানির ভবনে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেবোরা ব্রাউন। এর আগে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টম (সিপিজে) গাজার তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলে যে, এটি করা না হলে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সবটুকু চিত্র তুলে ধরা সম্ভব হবে না। এর ফলে এই যুদ্ধকে ঘিরে নানান প্রোপাগান্ডা ও গুজব ছড়ানোর ঝুঁকি তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা করছে সংগঠনটি। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ২৯ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিপিজে।
হামাসের সঙ্গে তীব্র লড়াই: গাজার উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জায়গায় শুক্রবার রাতে ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে তীব্র লড়াই হয়েছে বলে দাবি করেছে ফিলিস্তিনির সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সামরিক শাখা আল কাসাম ব্রিগেডস। সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলি সৈন্য ও ট্যাংক গাজায় প্রবেশ করলে উত্তর গাজার বেইত হানুন এবং মধ্য গাজার বুরেজের কাছে ভয়াবহ যুদ্ধ হয় বলে হামাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। যদিও বিবিসির পক্ষে তাত্ক্ষণিকভাবে হামাসের এ দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে শুক্রবার রাতে গাজায় ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। কিছুক্ষণ পরপরই সেখানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ হতে দেখা গেছে। এর আগে, শুক্রবার সন্ধ্যায় গাজায় হামলা জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছিল ইসরায়েল। তখন নিরাপদে থাকার জন্য গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদেরকে বলা হয়েছিল দক্ষিণে সরে যেতে। তবে গত রাতের হামলার মাধ্যমে গাজায় স্থল অভিযান শুরু হয়েছে কি-না, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি তেল আবিব।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় তাদের স্থল অভিযান আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ইলন লেভির কাছে জানতে চেয়েছিল বিবিসি। তিনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান আরো বড় করেছে ইসরায়েল। এর বাইরে, এই অভিযানের বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ এদিকে, গাজা উপত্যকায় কিছু সৈন্য ঢুকেছে বলে মার্কিন গণমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একজন মুখপাত্র। তবে তিনিও স্থল অভিযান শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেননি। মেজর নীর দিনার নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, আমাদের সৈন্য এবং ট্যাংক গাজা উপত্যকার ভেতরে অবস্থান করছে এবং তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গতকালও আমাদের সৈন্য ও ট্যাংকগুলো গাজার ভেতরেই ছিল। ইসরায়েল জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর প্যারাগ্লাইডারে করে হামাসের যে সশস্ত্র যোদ্ধারা ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিল, তাদের প্রধান আসেম আবু রাকাবাকে তারা হত্যা করেছে।
যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাব পাশ: মানবিক সহায়তার জন্য গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। শুক্রবার অনুষ্ঠিত সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়। আরব দেশগুলোর পক্ষে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে জর্ডান। এ সময় সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ১২০টি দেশ এবং বিপক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দেয়। এছাড়া ভোটদানে বিরত ছিল ৪৫টি সদস্য দেশ। বাংলাদেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। গৃহীত এই প্রস্তাবে হামাসের কাছে জিম্মি বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, জিম্মিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা ও সুস্থতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। অধিবেশনে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সন্ত্রাস ও নির্বিচার হামলাসহ সব ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানানো হয়। একই সঙ্গে দুই দেশের বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদানের পাশাপাশি নির্বিঘ্নে ত্রাণ সহায়তা প্রদানেরও আহ্বান জানানো হয়। —বিবিসি