ভিক্টিম সেজে ইসরাইলি মডেলে মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্রে ভারত!

ভারতীয় মিডিয়ার মুসলিম টার্গেটে চক্রান্তের গন্ধ

প্রকাশিত: ৩:২৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

ফিলিস্তিন ও আরাকানের পর আরেকটি ভয়াবহ মুসলিম নিধনের হটস্পটে পরিণত হয়েছে উগ্র সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ভারত। দেশটির হিন্দুত্ববাদী মুসলিম বিদ্বেষ একটি সিস্টেমেটিক জেনোসাইডে পরিনত হয়েছে।‌ বিশ্লেষকদের মতে, ভিকটিম সেজে দখলদার ইসরাইল যেভাবে ইসলাম-বিদ্বেষী কিছু পরাশক্তির সহায়তায় ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও দমনপীড়ন চালাচ্ছে ঠিক একই মডেলে ভিকটিম হওয়ার নাটক সাজিয়ে মুসলিম নিধনের ষড়যন্ত্রে নেমেছে গুজরাটের কসাই মোদি। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানেয়াহুর সাথে মোদির ঘনিষ্ঠতা ও মুসলিমবিরোধী ইস্যুতে পরস্পরকে সহায়তার ইতিহাস সবার জানা।

ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট পহেলগাম এলাকায় একটি পর্যটকদলের উপর বন্দুক হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে। এমন সময় এই ঘটনা ঘটল, যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সউদি আরব সফরে ছিলেন এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স ভারত সফর করছিলেন।

পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো মঙ্গলবারের এই হামলাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় চলছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঘটনা প্রবাহে ভারত যখন এক কঠিন সন্ধিক্ষণ পার করছে, তখন কাশ্মিরে হামলায় বেসামরিক লোক হতাহতের ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।কাশ্মির যদিও দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল তবে পর্যটকদের উপর এমন আক্রমণের ঘটনা বিরল। কেননা স্থানীয়দের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস পর্যটন।

হামলার পরপরই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া জূড়ে কোনও প্রমাণ ছাড়াই এই হামলার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক যুক্ত করতে শুরু করে। এই ঘটনায় অতিরঞ্জিত ও মনগড়া তথ্য দিয়ে মুসলিমদের টার্গেটে পরিণত করা হয়। পর্যটক হত্যাকে কেন্দ্র করে ঝড়ের গতিতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপির মুসলিম
বিদ্বেষী বয়ান প্রচারে নেমে পড়ে ভারতীয় মিডিয়া। দেশটির গোদি মিডিয়ার এই অতি উৎসাহী মুসলিমবিদ্বেষী বয়ান প্রচারে চক্রান্তের গন্ধ দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।

ভারতে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারা পরিবর্তন এবং একের পর এক নতুন নতুন আইন করে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশটির বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে মুসলিম নির্যাতন করা হচ্ছে। প্রায়ই লোমহর্ষক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। যা মুসলিম বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করছে। সর্বশেষ ওয়াকফ আইন পাস করে ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা উস্কে দেয়া হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে মসজিদ, মাদরাসাসহ মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।‌ এমন পরিস্থিতিতে কাশ্মিরের বন্দুক হামলার ঘটনায় কারা ফায়দা পেতে পারে তা দিনের মত স্পষ্ট। তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়াই এর দায় মুসলমান জঙ্গি এবং পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে পরিস্থিতিকে আরো উত্তপ্ত করা হচ্ছে।‌ ভারতজুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের খেপিয়ে তুলে মুসলিমদের কোনঠাসা করতে এবং মুসলিম নিধনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারের পক্ষে যেকোনো চক্রান্তের পথ বেছে নেয়াটা খুবই স্বাভাবিক বলে মনে করে অভিজ্ঞজনরা।

এই হামলা নিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম আরওয়াই নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এটি একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ বা সাজানো হামলা হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে যে তারা রাজনৈতিক ফায়দা নিতে এই ধরনের হামলা ঘটাতে পারে। আগেও একাধিকবার এই ধরনের সাজানো হামলার ইতিহাস রয়েছে। দেখা গেছে, পরবর্তীতে এসব ঘটনায় নিজেদের দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ‌ উপস্থাপন করতে পারেনি ভারত।

২০০০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের দিল্লি সফরের আগে একই রকমের হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৩৬ জন ভারতীয় নিহত হয়। কিন্তু কারা এটি ঘটিয়েছিল তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক ছিল। সেই সময় ভারত পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গিদের দোষারোপ করলেও ভারতীয় এবং কাশ্মীরি পর্যবেক্ষকরা এটিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেই আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেন।

পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলো বলছে, হামলার পরপরই ভারতের গণমাধ্যম ও রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র) এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলো পাকিস্তানকে লক্ষ্য করে ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়াতে শুরু করে। হামলাকে ধর্মীয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। দাবি করা হয়, অমুসলিম পর্যটকদের টার্গেট করা হয়েছে। ধর্ম দেখে দেখে হত্যা করা হয়েছে, কালেমা পড়তে বলা হয়েছে, কাপড় খুলে ধর্ম যাচাই করা হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন অভিযোগের পর বিশ্লেষকরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, অভ্যন্তরীণ ব্যর্থতা আড়াল, মুসলিমদের কোনঠাসা এবং পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এটা সাজানো হামলা হতে পারে।

বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, পহেলগামে বৈসারণ উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলার ঘটনা হিন্দুত্ববাদী ভারত সরকার যেভাবেই ব্যাখ্যা করুন, কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠি বা স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠি এ হামলার সাথে জড়িত থাকলে তা কোনো লক্ষ্য অর্জন করবে না। নিরস্ত্র বেসামরিক লোকদের উপর এ ধরণের হামলা সাধারণ কাশ্মিরিরা সমর্থন করবে না।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন-সহ বিশ্বনেতারা হামলার নিন্দা করে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত।

পাকিস্তানের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় হামলায় পর্যটকদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনও সম্পর্ক নেই। এগুলো সবই তাদের দেশীয় বিদ্রোহ। তাদের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। একটা নয়, দুটো নয় কয়েক ডজন রাজ্যে- নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, দক্ষিণে, ছত্তিশগড়ে, মণিপুরে।”

জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, মঙ্গলবারের হামলা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর পরিচালিত যেকোনো হামলার চেয়ে অনেক বড় ধরনের হামলা।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটিকে বর্বরোচিত আক্রমণ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে তিনি চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশে থাকবেন।

ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত জিও নিউজকে বলেন, ভারত হয়তো বালাকোট টাইপের কিছু করবে। তাই পহেলগামে নাটক তৈরি করা হয়েছে। ভারতে অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে, মুসলমানরা ভারতে একটি আইন সংশোধনের প্রতিবাদ করছে। তারা মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে মুসলমানদের কোনঠাসা করছে। এটিকে হিন্দু-মুসলিম সমস্যা হিসেবে তৈরি করছে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।তবে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ নামক একটি সশস্ত্র সংগঠন এর পেছনে থাকতে পারে।

নেটিজেনরা বলছেন, কাশ্মিরের নাটকটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন
নেই! স্বজাতির ২৬টা নিষ্পাপ প্রাণ বলি দিলো শুধু মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য।ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনকে থামানোর জন্য এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাশ্মিরে একটি জঙ্গি নাটক সাজানো হয়েছে। এখন ভারতে মুসলিম নিধনের মাত্রা বহু গুণে বেড়ে যাবে। মোদির প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে হাসিনার চালানো জঙ্গি নাটকের মুখোশ আজ যেমন উন্মোচিত হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে কাশ্মিরের এই জঙ্গি নাটকেরও মুখোশ উন্মোচিত হবে।

জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেভাবে ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ এবং মুসলিম বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাতে আমি প্রচন্ডভাবে উদ্বিগ্ন। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এই ঘটনার সুযোগ নিতে সেখানকার ঐও
হিন্দুত্ববাদীরা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে না। তারা সমগ্র ভারতে মুসলিম বিরোধী ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে আরো নির্যাতন ও মার্জিনালাইজড করার চেষ্টা করবে।

তবে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি এই ঘটনায় কারা জড়িত বা এই ঘটনার সাথে কোন মুসলিম সংগঠন জড়িত কিনা। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে একটি মুসলিম চরমপন্থী সংগঠনের নাম জড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, তবে সেটি কতটা বাস্তব, নাকি ব্যর্থতা এড়ানোর জন্য নন্দ ঘোষের উপরে দায় চাপানোর প্রবণতা, সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কেননা অতীতে কাশ্মীরী স্বাধীনতাকামীরা পর্যটকদের উপর কখনো হামলা করেনি। পর্যটকরা কাশ্মীরের অর্থনীতির প্রাণ। কাশ্মীরে পর্যটন না থাকলে সেখানকার অর্থনীতি পঙ্গু ও ধ্বংস হয়ে যাবে, যার প্রধান শিকার হবে সেখানকার স্থানীয় জনগণ। হোক সে স্বাধীনতাকামী কিংবা সাধারণ নাগরিক। তাছাড়া এভাবে পোশাক খুলে ধর্ম চেক করে গুলি করার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, অতীতে কোন স্বাধীনতাকামীদের বেলায় এ ধরনের অভিযোগ বা কার্যক্রম দেখা যায়নি। এটা একটা স্পষ্ট ইঙ্গিতবহ।

কলকাতার সায়াক ঘোষ চৌধুরী লিখেছেন, আমি সাধারণত বিশ্বাস করি না, অমিত শাহ – অজিত দোভালদের সাহায্য ছাড়া কোনো অস্ত্র বা অস্ত্র চালানোর লোক কাশ্মীরে ঢুকতে পারে। আগে তবুও অনেক জায়গা ছিল যেখান দিয়ে জঙ্গী ঢোকার সুযোগ ছিল।এখন টেকনোলজির উন্নতির পরে সেই সব জায়গা অতি সহজেই নজরদারি করা যায়।
আর আমি কার্গিল যুদ্ধের পরে কাশ্মীরে গেছি। আমি কোনোদিন শুনি নি, “পর্যটকদের জঙ্গিরা হত্যা করে”

আমাকে মিলিটারি কমান্ডার বুঝিয়েছিলেন, “জঙ্গিরাও পর্যটকদের আক্রমণ করে না। কাশ্মীর বেঁচে থাকে ট্যুরিজম এর উপরে। ওদের টার্গেট আমরা। “জঙ্গিরা কোন ধর্ম সেটা জিজ্ঞাসা করে হত্যা করছিলো”, সেটাতেই বোঝা যায় যে প্ল্যানিং অনেক উপর থেকে এসেছে।