ভূমিকম্পে কি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের হিসাব বদলাবে?

আল জাজিরার বিশ্লেষণ

প্রকাশিত: ১১:২১ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

ত্রাণ বিতরণে ব্যস্ত বিদ্রোহীরা, আসিয়ানের আহ্বান উপেক্ষা করে হামলা অব্যাহত জান্তা বাহিনীর

গত মাসে মিয়ানমারে হয়ে যাওয়া ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প দেশটির জন্য ছিল এক বড় ধাক্কা। প্রাকৃতিক এ বিপর্যয়ে মারা গেছেন কয়েক হাজার মানুষ। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। ধ্বংস হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, সেতু, মন্দিরসহ আরও অনেক স্থাপনা। কিন্তু এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছায়ায় মিয়ানমারের দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধের সংকট আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভূমিকম্পের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সাগাইং শহর ও এর আশপাশের এলাকায়। ভূমিকম্পের কারণে সেখানে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ত্রাণ ও সহায়তায় নেমেছে বিদ্রোহীরা। কিন্তু সেনাবাহিনী এ সুযোগে আরও এলাকা দখলের চেষ্টা করছে। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংককে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ভূমিকম্প-পরবর্তী সময়ে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান। কিন্তু তা উপেক্ষা করে হামলা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী। গত কয়েক দিনে এসব হামলায় প্রাণ গেছে অন্তত ২৬ জনের।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পে সেনাবাহিনীর অস্ত্র উৎপাদন কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ফাঁকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো তাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে। বিশেষ করে আরাকান আর্মি এখন রাখাইন ছাড়িয়ে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বাহিনীগুলোর শক্তিমত্তা এখন এত বেশি, তারা চাইলে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

তবে শুধু অস্ত্র বা বাহিনীই নয়, মানুষের সমর্থনও এখন বড় একটা বিষয় হয়ে উঠেছে। ভূমিকম্পের পর সেনাবাহিনী যখন মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বিদ্রোহীরা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে মন দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করছে। এদিকে, সেনা শাসকদের মধ্যে কুসংস্কারও বড় প্রভাব ফেলছে। অনেকেই ভূমিকম্পকে ‘ঈশ্বরের শাস্তি’ হিসেবে দেখছেন।

সব মিলিয়ে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি এখন জটিল রূপ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পে সেনাবাহিনীর ভিত নড়ে গেছে, বিদ্রোহীরা আত্মবিশ্বাসী, আর সাধারণ মানুষ এখন বিচার করছে কে আসলে তাদের পাশে আছে। তবে এটুকু নিশ্চিত, ভূমিকম্প শুধু মিয়ানমারের মাটিই নয়, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও কাঁপিয়ে দিয়েছে।