ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্কুলের অভাবে শিক্ষার আলো থেকে ঝড়ে পড়ছে কোমলমতি শিশুরা। উপজেলার বিস্তীর্ণ এই জনপদে কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয় না থাকায় পড়াশোনা ছেড়ে শিশুশ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। কিশোরগঞ্জের ভৈরবের অবহেলিত সাতমুখী বিল এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে বাড়ছে শিশুশ্রম, নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও মাদকাসক্তের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। ভৈরব পৌরসভার ভৈরবপুর উত্তরপাড়ার (৭নং ওয়ার্ড) সাতমুখী বিল এলাকাটি এক সময় পতিত জমি থাকলেও দীর্ঘ একযুগ ধরে ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে শত শত ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আজ শনিবার (২২ জুলাই) ভৈরব উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদ ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সাতমুখী বিল, গোধূলি সিটি ও স্টেডিয়াম পাড়া এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাবে প্রায় সহস্রাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় নিরক্ষর থেকে যাচ্ছে ওই এলাকার অধিকাংশ শিশু-কিশোর। শিক্ষার অভাবে বাড়ছে শিশুশ্রম, নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও মাদকাসক্তের মতো মারাত্মক অপরাধ। স্কুলে না যাওয়ায় শিশুদের দিন কাটে খেলাধুলা আর আড্ডায়।
সরকারি শিক্ষা প্রকল্পের সুফল না পাওয়া গোধূলি সিটি, স্টেডিয়াম পাড়া ও সাতমুখী বিল এলাকার শত শত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের দাবি, সরকারি ব্যবস্থাপনায় ওই এলাকায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা জানায়, সাতমুখী বিল এলাকায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় দূরের স্কুলে গিয়ে পড়তে হয়। স্কুলে হেঁটে যেতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। স্কুল দূরে হওয়ায় ক্লাসে যাওয়া হয় না নিয়মিত। তাছাড়া এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুলে যেতে হলে মহাসড়ক ও ব্যস্ততম সড়ক পার হতে হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনারও শিকার হতে হয়। তারা জানায়, স্কুল দূরে হওয়ায় বেশিরভাগ শিশু স্কুলে ভর্তিই হয়নি। তাই এলাকার শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সাতমুখী বিল এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুরা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. সেলিম জানান, গোধূলি সিটি, স্টেডিয়াম পাড়া ও সাতমুখী বিল এলাকায় অন্তত ৮০০ পরিবার বসবাস করে। ওই এলাকায় কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা তাদের মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার অভাবে বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম ও মাদকের মতো ভয়াবহ অপরাধে যুক্ত হচ্ছে শিশু-কিশোররা। সাতমুখী বিল এলাকায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে ওই এলাকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে আর বঞ্চিত হবে না।
স্থানীয় প্রবাসী বাসিন্দা রিটনউজ্জামান খোকন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেখছি অবহেলিত সাতমুখী বিল এলাকায় কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ফলে বেশিরভাগ শিশু শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের মৌলিক শিক্ষার কথা চিন্তা করে আমি সরকারি নিয়ম মোতাবেক যতটুকু জায়গা প্রয়োজন দিতে প্রস্তুত আছি। আমি চাই আমার মরহুম দাদা কাজী মোমতাজ মিয়ার নামে যেন স্কুলটির নামকরণ করা হয়।
এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ছিদ্দিকুর রহমান জানান, পৌরসভার ৭নং ওর্য়াডভুক্ত সাতমুখী বিল একটি জনবসতি এলাকা। নিকটবর্তী স্কুলের দূরত্ব এক-দেড় কিলোমিটার। আমরা দেখেছি সেখানে একটি বিদ্যালয় খুবই প্রয়োজন। ওই এলাকায় ভর্তি উপযোগী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক। যদি সেখানে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করা যায় তাহলে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ভালো হবে। তিনি বলেন, যদি কোনো জায়গাদাতা পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে বলবো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। তাহলে ভবিষ্যতে সুযোগ এলেই আমরা বিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবনা পাঠাতে পারবো।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রসারের জন্য তৃণমূল পর্যায়ে বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ মাসের ৬ তারিখেও যে সকল গ্রামে বিদ্যালয় ছিল না সেরকম ৭টি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। অতিশিগগিরই সেই স্কুলগুলোর কাজ শুরু হবে।