ভোরে উঠে বাচ্চাকে নিয়ে এসে শুনছি স্কুল বন্ধ’

প্রকাশিত: ১২:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৪

জেলা প্রতিনিধি, নওগাঁ

নওগাঁয় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সোমবার (২২ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছিল। সর্বশেষ গতকাল রোববার (২১ জানুয়ারি) সবনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সোমবার (২২ জানুয়ারি) সেই তাপমাত্রা আরও কমে গেছে। আজ সকাল ৯টায় নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। চলতি মৌসুমে এটাই জেলায় রেকর্ডকৃত সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে ছুটির বিষয়টি অভিভাবকরা অবগত না থাকায় অনেকেই নির্ধারিত সময়ে শীতের তীব্রতাকে উপেক্ষা করেই বিদ্যালয়ে কোমলমতী শিশুদের নিয়ে ছুটে এসেছেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে ছুটে এসে পড়েছেন একই দুর্ভোগে।

শহরের হাঁট নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল ছুটির বিষয়টি আমাদেরকে জানানো হয়নি। ভোরে উঠে বাচ্চাকে প্রস্তুত করে এসে শুনছি ক্লাস বন্ধ। তাই ফিরে যেতে হচ্ছে। কনকনে শীতে স্কুল বন্ধ থাকলে আমরা বাচ্চাকে নিয়ে দুঃশ্চিন্তামুক্ত থাকি। তবে ছুটির বিষয়টি অন্তত মেসেজে হলেও জানানো উচিত ছিলো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গতকাল রবিবার দুপুরের আগেই ছুটি ঘোষণা হওয়ার পরেও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমাদেরকে বিষয়টি অবগত করেননি। বিকেলে বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ততক্ষণে অভিভাবকদের অবগত করার সুযোগ ছিলো না। তাই অনেকেই এসে ঘুরে যাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইতিয়ারা পারভীন বলেন, গতকাল রবিবার আমি ছুটিতে ছিলাম। তাই প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির বিষয়টি সঠিক সময়ে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জানাতে পারিনি। যেহেতু এখনো প্রচুর শীত, আগামীতে ছুটি বৃদ্ধি পেলে বিষয়টি খেয়াল রাখা হবে।

ছুটি বাড়ানো হবে কি না? জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান  বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলো সকাল ১০টার আগে শুরু হয় না। তাই সকাল ৯টার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা সম্ভব নয়। এরপরেও আজ সোমবার স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। আজকে ১০টার পর তাপমাত্রা কোন উপজেলায় কত ছিল, সেবিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির কম থাকলে শুধুমাত্র সেখানে ছুটি ঘোষণা করা হবে। চলমান মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পরিস্থিতি বিবেচনায় সোমবার জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের ১ হাজার ৩৭৪টি এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

এদিকে গত কয়েকদিনের শৈত্যপ্রবাহে নওগাঁর হাসপাতালগুলোতে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী রোগী ভর্তির সংখ্যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। বর্তমানে শহরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে অনেক রোগীকে শয্যা সংকটে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছেন। যা চরম দুর্ভোগে ফেলেছে রোগীদের।

২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও ভারপ্রাপ্ত) আবু আনছার আলী বলেন, শীতজনিত রোগ এখন শিশু আর বয়স্কদের মাঝে সীমাবদ্ধ নেই। সব বয়সী মানুষই সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালে শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৪ জন শিশু ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যতক্ষণ আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরেই বাইরে না বেরনোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।

সোমবার শহরের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর হলেই জীবিকার তাগিদে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে বেরিয়েছেন শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষরা। ঘর থেকে বেরিয়ে বাজারে আসার পর ঘন্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তাদের অনেকেই কাজ পাচ্ছেন না। হতাশ হয়ে আবারও ফিরে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। তীব্র শীতের কারণে কাজের সংকট দেখা দেওয়ায় এসব মানুষদের জীবনযাত্রায় বেশ প্রভাব পড়েছে। এছাড়া গরম কাপড়ের অভাবে চরম বেকাদায় পড়েছেন ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের অনেক মানুষরা।

শহরের আরজী নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা হারজুন খাতুন বলেন, অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। শীত আসলে কম্বল কেনার মতো টাকাও নেই। ২ বছর আগে কম্বলের একটা টোকেন দিয়েছিলেন পৌর কাউন্সিলর। এরপর আর কেউ কোনোদিন কম্বল দেয়নি। সরকারি কম্বল বিতরণ চোখেই পড়ে না।

নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিন শীষ  বলেন, এ বছর শীতের শুরু থেকেই অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষদের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ৮ হাজার পিস এবং বেসরকারি দুইটি সংস্থার মাধ্যমে ১ হাজার ৫০০ পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে কম্বলের বরাদ্দ এখনো আসেনি। আবারও বরাদ্দ পেলে কম্বল বিতরণ করা হবে।

নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাহবুব আলম  জানান, গতকাল রোববার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেটা কমে গিয়ে সোমবার সকাল ৬টা ও ৯টায় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আদ্রতা ছিল ৮৭ শতাংশ। এটাকে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এ রকম তাপমাত্রা আরও দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।