ডেস্ক রিপোর্ট:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা ভূখণ্ড নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তিনি গাজার মালিকানা চান এবং সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে পুনর্গঠনের কাজ করতে চান।
মঙ্গলবার ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে এনিয়ে একাধিক মন্তব্য করেছেন। গাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমরা এর মালিকানা চাই। প্রথমে ভেঙে পড়া সব বাড়ির ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে দেব। জমি সমান করব। ওখানে যে বোমা ও অস্ত্র আছে সেটাও সরিয়ে দেব।”
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার পরিকল্পনা হলো, আর্থিক উন্নয়ন করা এবং স্থানীয় মানুষ যাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পান সেটা নিশ্চিত করা। বিশ্বের মানুষ সেখানে থাকবে। মানুষ শান্তিতে থাকবে। গাজার অবিশ্বাস্য সম্ভাবনা আছে। কিছু বড় কাজ সেখানে করতে হবে।
কিন্তু গাজা কোনো খালি জায়গা নয়। ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি মানুষ সেখানে বসবাস করেন। ট্রাম্পের প্রস্তাব, ফিলিস্তিনিদের গাজার বাইরে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হবে, যাতে তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারে।
তিনি জর্ডান ও মিসরকে বলেছেন, তারা যেন হৃদয়কে প্রসারিত করে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের জমি দেয়। কিন্তু মিসর ও জর্ডান তাদের আগের অবস্থান থেকে সরছে না।
দেশ দুটি জানিয়েছে, তারা গাজার ফিলিস্তিনিদের তাদের দেশে আশ্রয় দেবে না। ট্রাম্পের ঘোষণার পর দুই দেশের রাষ্ট্রনেতারা জানিয়েছেন, তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করেন, কিন্তু গাজার মানুষদের সেদেশে নেওয়ার কোনো প্রশ্ন নেই।
জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের স্তেফান রোল গত সপ্তাহে বলেছিলেন, মিসরে এই ভাবে জমি দেওয়া নিষিদ্ধ। বিশেষ করে পুনর্বাসন প্রকল্পকে মিসরের মানুষ ফিলিস্তিন-বিরোধী কার্যকলাপ মনে করে।
জানুয়ারির শেষ দিকে এক সাক্ষাৎকারে রোল বলেছিলেন, “ফিলিস্তিনিদের আলাদা রাষ্ট্রের দাবিকে মিসর সমর্থন করে। কিন্তু তারা নিজের দেশে পুনর্বাসন প্রকল্প চায় না।”
আম্মানে পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ এডমুন্ড রাতকা বলেছেন, “জর্ডান শুধু আমেরিকার ঘনিষ্ঠ সহযোগীই নয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসাহায্যের ওপর নির্ভরশীল।”
তার মতে, “ট্রাম্পের এই অবস্থান জর্ডার্নের রাজাকে অত্যন্ত অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলেছে। একদিকে রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে, আবার তিনি ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন প্রকল্পও চান না।”
তবে মিসরের আল-আহরাম সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক আশরফ আল-আশরি বলেছেন, “কোনো আরব নেতাই ইসরায়েল বা অঅমেরিকার এই ধরনের প্রস্তাব মানবেন না। কোনো ফিলিস্তিনিকে স্থানচ্যূত না করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা মিসরের কাছে আছে।”
তিনি বলেছেন, “জর্ডার্নের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি আগামী সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে তাদের পরিকল্পনা পেশ করবেন।
তিনি জানিয়েছেন, একাধিক পর্যায়ে গাজা ভূখণ্ডের পুনর্গঠন করতে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে। এই পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে রাফা ও দক্ষিণ গাজা থেকে। তারপর তা মধ্য গাজায় আসবে। শেষ পর্যায়ে উত্তর গাজায় কাজ হবে।
তিনি বলেছেন, “আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো প্রচুর অর্থ দেবে। ইইউ, জাতিসংঘের কাছ থেকেও অর্থ আসবে। অন্য আন্তর্জাতিক সংগঠনও সাহায্য করবে। এই পরিস্থিতিতে আরব দেশগুলো এক হয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্য়াখ্য়ান করবে। এই প্রস্তাব অবাস্তব ও অকার্যকর।”
বার্লিনের থিংক ট্যাংক জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ পিটার লিন্টল মনে করেন, “মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ। ট্রাম্প বন্ধুত্বের ভাব দেখিয়ে বলছেন, এই অঞ্চলের মানুষ আরো ভালোভাবে থাকবে এবং মিসরকে গাজার মানুষদের আশ্রয় দিতে হবে, কিন্তু বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।”
তিনি বলেছেন, “যদি ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে যেতে না চান, তাহলে ট্রাম্প কী করবেন? এটা কি জোর করে করা হবে? আমেরিকা ও ইসরায়েলের ভূমিকা কী হবে?”
তিনি মনে করেন, “কীভাবে এই কাজ করতে চান, ট্রাম্প আগে সেটা বলুন। সবচেয়ে বড় কথা, এর ফলে গাজার উত্তেজনা কমবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা অর্থহীন। তার মতে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের ফলে গাজায় পুনর্গঠনের কাজে দেরি হতে পারে।”