রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
কাগজে কলমে রাজশাহীর চারঘাট প্রথম শ্রেনীর পৌরসভার মর্যাদা পেলেও নেই পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা। রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত চারঘাট পৌরবাসি।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় কয়েক লাখ পৌরবাসীর নাগরিকের সুবিধা না বাড়লেও পরিশোধ করতে হচ্ছে পৌরট্র্যাক্র ও পানির বিলসহ অন্যান্য ট্যাক্র। পর্যাপ্ত আলোর কথা বলা হলেও বাস্তবে নেই আলো। বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় জর্জড়োতি চারঘাট পৌরসভা শুধুই কাগজে কলমেই প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভা। এরপর ২০১৮ সালে ‘ক’ শ্রেনীতে উন্নীত পৌরসভাটি। ওয়ার্ড ৯টি, ১১টি মহল্লায় প্রায় ৩৭টি পাড়ার ৪০ হাজার জনবসতির পৌরসভাটির আয়তন ১৮.৭৩ বর্গকিমি। এসব জনবসতির চলাচলের জন্য প্রায় ১২৫ কিমি রাস্তায় ৮১ কিমি রাস্তা পাকা করা হয়েছে। ১৮ কিমি রাস্তা রয়েছে সেমি পাঁকা। এখনো পাকা হয়নি ২৬ কিমি কাঁচা রাস্তা। এ দিকে দীর্ঘদিন ধরে পাকা রাস্তার সংস্কার না করায় অধিকাংশ পাকাঁ রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার অনেক রাস্তায় পিচ উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। আর এ জন্য রাস্তা তৈরীতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারকে দায়ি করছেন পৌরবাসী। পৌরবাসীকে রাতের আধারেও পর্যাপ্ত আলোয় আলোকিত করতে ২৫০টি স্ট্রিট লাইট লাগালেও তা এখন অকার্যকর। ফলে অন্ধকারেই চলতে হয় পৌরবাসীকে।
সরেজমিনে পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের প্রায় অধিকাংশ সৌর লাইট বন্ধ। দু-একটি লাইট জ্বললেও তা অনেকটা নিভোনিভো অবস্থায় চলছে। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন ধরে লাইটগুলি বন্ধ থাকলেও এগুলো মেরামত করার কোন উদ্যেগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। ৯টি ওয়ার্ডের প্রায় ৯ হাজার পরিবারের মধ্যে মাত্র ৭শ পরিবারকে পানি সরবরাহের আওতায় নিলেও এখনো বেশীরভাগ পরিবারে নেই পানি। পৌরবাসীর নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের নিমিত্তে ২০২০ সালে ইউজিআইআইপি-৩ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লক্ষ লিটার ওভারহেড ট্যাংক তৈরি করা হয়। তবে ২০২৪ সাল পেরিয়ে গেলেও এখনো ব্যবহার করা হয়নি ট্যাংকটি।৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আজাদ বলেন, ‘প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা শুধু কাগজে কলমেই। এ পৌরসভায় করুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন নেই। নেই স্যুয়ারেজ লাইন, পর্যাপ্ত লাইটিং। সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয় এই শহরে। নির্বাচনের সময় মেয়ররা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও চোখে পড়ার মতো কোন উন্নয়ন দেখছি না।’
২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাফিজ বলেন, ‘চারঘাট পৌরসভাটি পদ্মা নদীর কোল ঘেষা পৌরসভা। ফলে পানি নিস্কাশনের জন্য প্রায় ১৮ কিমি পাকা ড্রেন তৈরি হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মানের ফলে আজ পানি নিস্কাশন তো দুরের কথা অল্প বৃষ্টিতেও রাস্তায় পানি জমে থাকে। নির্মিত ডেনেজ ব্যবস্থা কোন কাজেই আসছে না পৌরবাসীর।’
চিকিত্সক ও সমাজ সেবক ডা: আব্দুল হাকিম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রথম শ্রেনীর পৌরসভা হলেও উন্নয়নে স্থায়ী ও সময়োপযোগী কোন পরিকল্পনা তৈরি হয়নি। নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করেও সেবা পাচ্ছে না পৌরবাসী। অপরিকল্পিত নগরায়নে জনদুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে। বাজেটে নাগরিকদের সেবা প্রদানে কি কি কাজ হবে তার তালিকা এবং এর বাজেট জনসন্মুখে প্রকাশ করা দরকার।’
এ বিষয়ে পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী রেজাউল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তথ্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘তথ্য নিতে হলে প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
পৌর প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, ‘পৌরবাসীর সমস্যা সমাধানে আমরা বদ্ধপরিকর। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’