জেলা প্রতিনিধি,গাজীপুরঃ
তিন বছরের সাজিদ এখনও বুঝতে পারে না, কেন মা-বাবা আসছে না। যদিও ঈদের আনন্দ বোঝার বয়স তার হয়নি। মায়ের মমতামাখা স্পর্শ আর বাবার আদর থেকে যে চিরকালের জন্য বঞ্চিত হয়ে গেছে– সেটিও অজানা। তবু রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে অবুঝ শিশুটি।গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালায় সিলিন্ডারের গ্যাস থেকে সৃষ্ট আগুনে যে ৩৬ জন দগ্ধ হন, তাদের মধ্যে ছিলেন সাজিদের বাবা মাইদুল ইসলাম ও মা নার্গিস আক্তার। ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭ মার্চ সকালে মারা যান মাইদুল। একই দিন সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নার্গিস।
দুর্ঘটনার পর থেকেই সাজিদের আশ্রয় হয়ে ওঠেন ফুপু ময়ূরী খাতুন। মাইদুলের এই বড় বোন থাকেন একই কলোনিতে। তবে মা-বাবার দাফনের পর থেকে সাজিদ আছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বেড়াখোলা গ্রামে। সেখানে দাদা সাবেদ আলী খানের কাছেই দিন কাটছে শিশুটির। মা-বাবার চেনামুখটি দেখার জন্য প্রায়ই রাস্তার দিকে সে তাকিয়ে থাকে।গতকাল রোববার মোবাইল ফোনে সাবেদ আলী খান বলেন, ‘আমার ছেলে মাইদুল আর বউয়ের আয়ে সংসার চলত। এবারের ঈদে বাজার তো দূরের কথা, এতিম নাতিকে একটি সুতাও কিনে দিতে পারি নাই। অভাব কোনোভাবেই ছাড়ছে না।’
সাজিদ খানের ফুপু ময়ূরী খাতুন বলেন, মৌচাকের তেলিরচালা এলাকার স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন সাজিদের মা নার্গিস। মাইদুল ঝুটের গুদামে কাজ করতেন। তাদের আয়েই সংসার চলত।
১৩ মার্চ তেলিরচালার সফিকুল ইসলামের কলোনিতে দুর্ঘটনায় দগ্ধ হন রাজমিস্ত্রি মুনছুর আলী। পাঁচ দিন পর মারা যান তিনিও। এর পর থেকে দুই মেয়ে মোহসিনা আক্তার (১৩) ও মিনহা আক্তারকে (৬) নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মুনছুরের স্ত্রী দিনা আক্তার। রোববার তাঁর সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তিনি বলেন, স্বামী মুনছুরই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুর পর দুই মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।দিনা আক্তার বলেন, ‘এবারের ঈদে দুই মেয়েকে কিছুই কিনে দিতে পারি নাই। বাকি দিনগুলো কীভাবে যে যাবে, আল্লাহ জানেন!’
কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ বলেন, ঘটনার পর থেকেই দগ্ধ ব্যক্তিদের স্বজনের মাঝে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে আসছেন। নিহত কারও স্বজন যদি অসহায় অবস্থায় দিন কাটিয়ে থাকেন, তাদের সহযোগিতা করা হবে।ইউএনও কাউছার আহমেদ বলেন, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে লাশ দাফনসহ অন্যান্য কারণে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। কীভাবে তাদের স্বজনকে সহায়তা দেওয়া যায়, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন।